সব শিক্ষককে এমপিওভুক্তির দাবি বাকবিশিসের সম্মেলনে - দৈনিকশিক্ষা

সব শিক্ষককে এমপিওভুক্তির দাবি বাকবিশিসের সম্মেলনে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সব ননএমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)। সংগঠনের দশম জাতীয় সম্মেলনে এ দাবি জানান কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার। একইসঙ্গে সরকারি বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য নিরসনের দাবি জানান তিনি।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে সম্মেলন শুরু হয়। এতে সারাদেশ থেকে আসা সমিতির শিক্ষক নেতারা অংশ নেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম এবং কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার।

স্বাগত বক্তব্যে সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এমপিওভুক্ত। এমপিওভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম না। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হন। ননএমপিও শিক্ষকদের বেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্রভিন্ন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শতভাগ বেতন ভাতা পান। কিন্তু ননএমপিও শিক্ষকরা কিছুই পান না। ননএমপিওরা শিক্ষক খাতায় নাম লিখিয়ে টিউশনি আর কোচিং সেন্টারে যোগ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, যা লজ্জাস্কর। একই যোগ্যতা ও একই দায়িত্ব পালন করেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের চরম বৈষম্যের শিকার হতে হয়। শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারিকরণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করা সম্ভব না। আমরা এ বৈষম্য দূর করা দাবি জানাচ্ছি। আর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শতভাগ শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।  

তিনি আরও বলেন, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাকবিশিস প্রতিষ্ঠার পর মূল দাবি ছিলো শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারিকরণ। শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারিকরণ বলতে বাকবিশিসের দাবি হলো, শিক্ষার সব ব্যয় সরকার বহন করবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব আয় সরকারি কোষাগারে জমা হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি হবে না, শিক্ষকরাও সরকারি কর্মকর্তা বা চাকুরে হবেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিচালনা পরিষদের মধ্যেমে। শিক্ষক নিয়োগ হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষকরা কোনো রাজনৈতিক নেতার তোষামোদকারী হবেন না। বাইরে থেকে কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খবরদারী করবেন না। শিক্ষকদের সামাজিক মূল্য নির্ধারণ করে তাদের বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রশাসনিক বিভাগের সমান্তরাল ও কর্মকর্তাদের সমান করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য থেকে দূরে থাকতে হবে। সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর হলে শিক্ষকদের অন্য কোনো কাজে নিয়োজিত হবে না। 

তিনি বলেন, গত মহাজোট সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা শিক্ষানীতি-২০১০ পেয়েছি। কুদরতি খুদা কমিশনের সুপারিশে ছিলো একধারার বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রস্তাব। কিন্তু শিক্ষানীতিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ইংরেজি, বাংলা ও মাদরাসা ধারার শিক্ষা, এইখানেই সমস্যা। কওমি মাদরাসাকে রাখা হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সেখানে ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, গণিত যা একজন সাধারণ শিক্ষিত নাগরিক হওয়ার জন্য অপরিহার্য। ওইসব মাদরাসা থেকে প্রায়ই পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অভিযান, মিছিল ও শোভাযাত্রা। সংসদে গৃহীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে না শিক্ষা আইনের অভাবে। অনেক আগে শিক্ষা আইনের খসড়া হলেও তা ঘষামাজা এখনো শেষ হয় নাই। কার স্বার্থে এ বিলম্ব, প্রশ্ন তোলেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, শিক্ষা শুধু জ্ঞানের জায়গা নয়, এটা সামাজিক মূল্যবোধেরও বড় জায়গা, যে মূল্যবোধের দ্বারা আমরা মানবিক দর্শনকে আমরা প্রবলভাবে অনুভব করতে পারি। আমরা মানুষ, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই স্লোগান নিয়ে আমরা যদি বাস না করি, তাহলে আমাদের মাঝে সাম্প্রদায়িকতা খুবই জঘন্য দিক। আমি মনে করি, এই জঘন্য দিক আমাদের বাংলাদেশের চেতনাকে নষ্ট করবে, এটা যেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মর্যাদার আসনে উঠে যায়। আমাদের শিক্ষক সমিতি যদি তাদের শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক করে গড়ে তোলেন, তাহলে আমরা এই চিন্তাটা নিজেদের মাঝে ধারণ করতে পারবো। আমাদের অসাম্প্রদায়িক চিন্তা নিয়ে আমি আজকের এ সম্মেলনে আপ্লুত হচ্ছি যে, এভাবে আমাদের শিক্ষকরা রাষ্ট্রকে তাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে মর্যাদার আসনে আসীন করবেন। 

শিশুকালের স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, আমি যখন বগুড়ার লতিফপুরে প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম, তখন একজন শিক্ষক ছিলেন, তার পা এক্সিডেন্টে ভেঙে গিয়েছিলো, ক্রাচে ভর করে আসতেন। তিনি যখন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াতেন, তার নিজের দুটো কবিতার লাইন বলতেন, পাখি সব করে রব, রাতই পোহাইলো, কাননে কুসুম কলি সকলে ফুটিলো। এগুলো বলে আমাদেরকে বলতেন, তোরা চিৎকার করে করে বল, চিৎকার করে সব ছেলে মেয়েরাই বলতো। তখন তিনি পরে বলতেন, তোরা সবাই কুসুম কলি এখন, ফুটে উঠতে হবে। তোরা বড় জায়গায় ফুটে উঠবি, বড় মর্যাদার জায়গায় যাবি। যারা একটু দরিদ্র, বাবা-মা শিক্ষা দিতে পারবে না, তারা যেন মানবিকতার জায়গা থেকে বড় মানুষ হয়। তার আশেপাশে যে দিনমজুরগুলো আছে, তাদের যেন মানুষের মর্যাদায় শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। তাদের যেন তাচ্ছিল্য না করে, তোরা এভাবে বড় হবি। আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমার সেই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক একটি অসাধারণ দিক দিয়েছিলেন। আজকে ছিয়াত্তর বছর বয়সে এসে সেই কথাটা মনে রেখে, আমার মনে হয়েছে এটি জ্ঞানের একটি বড় জায়গা। এই জায়গাটা কখনোই ভোলার বিষয় নয়। আমাদের শেখানো উচিত সেই সব তরুণদের, শিশুদের, যারা ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে দেশের সামাজিকতাকে ধারণ করবে, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধারণ করবে, কিন্তু মানবিক চেতনার জায়গা থেকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হবে না। এটাই হবে শিক্ষার আরেকটি বড় দিক। আমরা সবাই মিলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় থাকবো। গত বছর পূজায় মন্ডপ ভাঙা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। এই জায়গাগুলো কেন হবে? ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, এই চেতনাবোধে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার বোধ যেন আমাদের বড় মাত্রায় নিয়ে যায় আর আমাদের শিক্ষক সমিতি যেন এই জায়গাটা ধারণ করে।  

অনুষ্ঠানে বাকবিশিসের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. মুয়াজ্জাম হুসেইন, অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. শেখ জিনাত আলী, অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক বদিউর রহমান, অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, নিরঞ্জন অধিকারী, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. শফি আহমেদ, অধ্যাপক এম এ বারী, অধ্যাপক নাজির হোসেন এবং অধ্যক্ষ আজহারুল ইসলাম আরজুকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সমিতির কেন্দ্রীয় নেতারা ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কমিটির নেতারা অংশ নেন।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073850154876709