সারাদেশের মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর কাছে অ্যাসাইনমেন্ট পৌঁছে দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে প্রায় আট মাস। এ বছর বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তবে শিখনফল অর্জনে শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করে গতকাল রোববার থেকে অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর; চলবে আগামী ছয় সপ্তাহ।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলছেন, সব শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া প্রায় অসম্ভব। মফস্বলের সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফোন নম্বরও শিক্ষকদের কাছে নেই। আবার অনেক নম্বর সচলও নেই। স্কুল বন্ধ থাকায় অসচ্ছল পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী নানা কাজে যোগ দিয়েছে, তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
তাঁরা বলছেন, টেলিভিশন ও অনলাইন ক্লাসের মতো অ্যাসাইনমেন্ট থেকেও হয়তো কিছু শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হবে মফস্বলের গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল ঢাকার বাইরে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন, প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর কাছে চলতি সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট তারা পৌঁছে দিতে পারেনি। রাজধানীসহ সারাদেশের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাউশি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঠিকমতো ঢুকতে পারেননি। আর ঢুকতে পারলেও অ্যাসাইনমেন্ট ডাউনলোড করতে পারছেন না। তারা সবাই অ্যাসাইনমেন্ট ডাউনলোড করেছেন দৈনিক শিক্ষার ওয়েবসাইট থেকে।
মাউশি অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখনফল মূল্যায়ন করা হবে। অভিভাবক বা অন্য কারো মাধ্যমে অথবা অনলাইনে এই অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ ও জমা দেওয়া যাবে।
কর্মকর্তাদের দাবি তারা অ্যাসাইনমেন্ট স্কুলগুলোতে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষকরা তা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করবেন। প্রথম সপ্তাহে কিছুটা এলোমেলো হতে পারে।
ভিকারুননিসার একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্টগুলো টেলিভিশন বা অনলাইন ক্লাসের মতোই হয়ে গেছে। যাদের অনলাইন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, তারা অনলাইনে ক্লাসও করেছে, এখন আবার সহজেই অ্যাসাইনমেন্টও করতে পারবে। আর যাদের অনলাইন ক্লাসের সুযোগ ছিল না, তাদের পক্ষে অ্যাসাইনমেন্ট করাটাও কঠিন হয়ে পড়বে।’
অ্যাসাইনমেন্টগুলো কিভাবে পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করতে আজ সোমবার টিচার্স মিটিং ডেকেছেন কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান। তারা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্টগুলো দেখে মনে হয়েছে, শুধু এগুলো শিক্ষার্থীদের দিয়ে দিলেই হবে না, তাদের তা বোঝাতেও হবে। এ জন্য আমরা প্রতি ক্লাসের ১০ জন শিক্ষার্থীকে ডাকতে পারি। কিন্তু এতেও আমার স্কুলের ৫৫২ জন শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যাবে। তবে যারা আসবে না তাদের বাড়িতে বাড়িতে শিক্ষকদের পাঠাব।’ অনেক শিক্ষার্থীরই স্কুলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তাই আগে শিক্ষকরা সভা করে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজবো।
যশোর সদর উপজেলার প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ডাকব। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সময় যে নম্বর দিয়েছিল, তা এখন বন্ধ। আবার আট মাস স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজে চলে গেছে। ফলে সবাইকে হয়তো পাব না।’