পরীক্ষা বিষয়টি দীর্ঘ সময় থেকে চলে আসছে। পরীক্ষার অর্থ শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পরিমাপ যাচাই করা। পরীক্ষা ব্যবস্থায় কোন শিক্ষার্থীর জ্ঞান লাভে ঘাটতি থাকলে সে দুর্বলতা পূরণের কোন সুযোগ থাকে না। পরীক্ষায় পাস, ফেল দুটো ফল থাকে। পাস হলে শিক্ষার্থীসহ পরিবারের মাঝেও আনন্দের সুবাতাস বয়ে বেড়ায়। আর ফেল হলে এর উল্টো চিত্র। শিক্ষার্থীসহ পরিবারের মাঝে বিষাদের কালো জমা হয়। শিশু শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা লাভে এ আনন্দও কান্নার বৈষম্য কোন অবস্থায় কাম্য নয়। সকল শিশু আনন্দঘন পরিবেশে জ্ঞান অর্জন করবে। এ প্রত্যাশা সকলের। গরিব, মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের সন্তান অযত্নে অবহেলা তাদের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশে এ দৃশ্য বেদনাদায়ক। স্বচ্ছল, বিত্তবান মানুষের সন্তানেরা টাকার বিনিময়ে তাদের শিক্ষা কিনবে। আর অসহায়, দরিদ্র পরিবারে সন্তানরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের ফলে শিক্ষা প্রাপ্তি বিঘ্ন ঘটবে। এতো কাম্য হতে পারে না।
বঙ্গবন্ধুর সময়ে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে প্রথম প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্যানেল হয়। এ প্যানেলই প্রথম ও শেষ। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে বাংলাদেশে চলে আসছে প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট। শিক্ষকদের অবসর গ্রহণ, মাতৃত্বছুটি, প্রশিক্ষণ, অন্য পেশায় চলে যাওয়া, মৃত্যুসহ নানা কারণে পদ খালি হয়। অনেকটা জমিদারি স্টাইলে সময়ক্ষেপণ করে ২/৩/৪ বছর পর নিয়োগ দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি তো িএক যুগ ধরে বন্ধ। একদিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, অপরদিকে শিক্ষক নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শূন্যপদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
করোনার পর সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের তোড়জোড় পরিলক্ষিত হয়। অথচ, প্রাথমিকের কী কারণে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে নিয়োগ পরীক্ষা পিছানো হলো বোধগম্য নহে। শিক্ষক সংকট নিয়ে কথা বলার কারণ হলো, দীর্ঘ করোনার শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণে বা যেকোন সময়ে শিক্ষক সংকট কাম্য নয়। অপরদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঘাটতি পূরণে পরিকল্পনায়, ব্যাপক সিলেবাস শিক্ষকদের দৌড়ের ওপর পাঠ সমাপ্ত করতে হচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে দুর্বল শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাময়মূলক পাঠের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ব্যহত হচ্ছে। ফলে অকার্যকর মূল্যায়ন সকলের মাঝে বিরূপ ধারণা বয়ে আনবে। জনগণের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা জন্মাবে এ যেন অটোপাস। এদিকে বিপুল সংখ্যক শিশু পরীক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আবদ্ধ থাকছে। কিন্ডারগার্টেনের বিপুল সংখ্যক শিশু সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় শিশু শিক্ষার বৈষম্য বেড়েই চলছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞান অর্জনমুখী শিক্ষাক্রম সফল বাস্তবায়নে ঐ বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। সকল শিশুর জন্য প্রয়োজন অভিন্ন বই, সময়সূচি ও মূল্যায়ন বা পরীক্ষা পদ্ধতি।
শিশু মনোবিজ্ঞান জ্ঞানবিহীন কর্মকর্তাদের ইচ্ছায় চলে কীর্তন। এটি শিশু শিক্ষায় চলতে দেওয়া সমীচিন নয়। এ প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী সহ শিশু শিক্ষায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শ বোর্ড গঠন করার যুক্তিকতা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
শিক্ষক সংকট শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, শিশুর প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ ও শিশুবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিকে ক্যাডার সার্ভিসসহ প্রয়োজন সহকারী শিক্ষক পদ হতে শতভাগ পদোন্নতি। আমরা শিশুদের ভালোবাসি। অথচ তাদের মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে উল্টো পাল্টা কাজ করছি। শিশুদের শিক্ষা নিয়ে বাস্তবসম্মত ভাবনা হোক সবার মাঝে। সফল বাস্তবায়ন হোক আনন্দঘন পরিবেশে শিশুর শিক্ষা।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষা