বনানীর আইপিএইচ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি একেএম জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। প্রতিষ্ঠানের ১০০ জন অভিভাবক তাদের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছেন।
এতে অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানের ২৫ লাখ টাকার এফডিআর ভেঙে খরচ, রেজিস্টার অনুসরণ না করেই আয়-ব্যয় এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ার অভিযোগও করেছেন। তারা গভর্নিং বডির সভাপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন।
এর আগেও এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) পাঁচজন সদস্য সভাপতি একেএম জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একগুঁয়েমি, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতিষ্ঠানের এফডিআর ভেঙে খরচ, অব্যবস্থাপনা ও নৈতিক স্থলনের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। ওই সময় তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল, কমিটির অন্য সদস্যদের না জানিয়েই সভাপতি সব সময় তার ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয় করেন। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের কু-প্রস্তাব দেন।
পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য রুনু বেগম বলেন, সভাপতির অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তার মেয়েকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে তিনি মামলা করে ছাত্রত্ব ফেরত পান। তার কন্যা এ বিদ্যালয় থেকে পাস করে গেছে।
তিনি আরও জানান, সভাপতির দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কারণে তার বর্তমান ও শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি, সন্ত্রাসী দিয়ে বাসায় হামলা, রাস্তাঘাটে অপমান-অপদস্থ করা হয়। রাস্তায় হামলার চেষ্টা করলে দৌড়ে এক বাড়িতে ঢুকে রক্ষা পান। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
রুনু বেগম বলেন, একেএম জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা পাঁচ সদস্যের মধ্যে আরও দু'জনকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করার ঘটনা ঘটেছে।
অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, একেএম জসীম উদ্দিন সভাপতির দায়িত্ব নেন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে। তিনি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হননি। তিনি সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিজেকে গভর্নিং বডির সভাপতি পদে মনোনয়নের প্রস্তাব শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন করিয়ে আনেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৯৬ লাখ টাকা দোতলা ভবনের ওপর আরও তিন তলা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনো সভা না করেই তিনি পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করে এবং লাভের শেয়ার রেখে ভবন নির্মাণ করেন। তিন তলা নির্মাণ না করে দোতলা পর্যন্ত নির্মাণ করেই সব অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে মর্মে তিনি অজুহাত দাঁড় করান। এমপিওভুক্তির কথা বলে নতুন শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা তিনি আদায় করেন। আইডি কার্ড তৈরি ও প্রিন্টিং কাজ ইত্যাদি বাবদ ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠানকে বিল দিয়ে দেন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে আইপিএইচ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি একেএম জসীম উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে, তার তদন্ত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, স্কুলের ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছি- তার তথ্য-উপাত্ত কোথায়? শুধু অভিযোগ দিলেই তো হবে না। প্রতিটি অভিযোগের ওপর তদন্ত করতে হবে।
শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের যৌন হয়রানি বিষয়ে তিনি বলেন, এখন আমার বয়স ৭১ বছর। আমার সামাজিক মর্যাদাকে নষ্ট করার জন্য কেউ যদি আপনাদের কাছে অভিযোগ দেয়, তার তো তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করতে হবে।