সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাও একদিন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে - দৈনিকশিক্ষা

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাও একদিন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের ২২টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এ বছর (শিক্ষাবর্ষ ২০২১-২০২২) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ৩০ জুলাই থেকে। প্রথম দিন বিজ্ঞান এবং আগামী মাসের ১৩ ও ২০ তারিখ যথাক্রমে মানবিক ও বাণিজ্য ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে। গত বছর ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল এবং এ বছর আরো দুটি যোগ হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একত্রে পরীক্ষা নিতে সক্ষম হচ্ছে। বুধবার (২৭ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়,  আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ আহ্বান এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট লাঘবের কথা বিবেচনায় এনে যে যাত্রা আমরা শুরু করেছি তা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে এ আশা দৃঢ়ভাবে করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই।

ভর্তি পরীক্ষার জন্য একজন শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবককে সকালে কোনো এক শহরে বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশে কিংবা ভর্তি কেন্দ্রের ক্যাম্পাসে বেঞ্চে বসে ঝিমোতে দেখলে শিক্ষক হিসেবে আমি কষ্ট পাই। হয়তো দুপুরে তাঁর ভর্তি পরীক্ষা। ওই শহরে তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজন নেই, যাদের কাছে গিয়ে একটু সময় বিশ্রাম নিতে পারে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অন্ততপক্ষে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কষ্ট লাঘব করতে সক্ষম হচ্ছে। এ পরীক্ষা পদ্ধতির অনেক সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু সেগুলো সীমাবদ্ধতা হিসেবে নিয়ে আমরা সামনে এগোতে চাই। এত বছর আমরা স্বায়ত্তশাসনের দোহাই দিয়ে এ পদ্ধতি থেকে দূরে ছিলাম। আমরা পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আনছি না, বরং একটি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছি। প্রশ্নপত্রে আমরা বাংলা, ইংরেজি, রসায়ন, গণিত ইত্যাদি বিষয় বাদ দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছি, নাকি উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ের বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করছি না। আমরা কোনোটাই বাদ দিচ্ছি না, বরং একটি পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের মতামত, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি সুন্দর ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করছি। এতে আমরা নিজেদের উন্নত করছি এবং শিক্ষার্থীদের সঠিক মেধা যাচাইয়ের পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাচ্ছি। এ পদ্ধতির সমালোচনা করার সুযোগ কম, বরং এর ভেতরের কোনো একটি বিষয়কে সমালোচনায় আনতে পারি, যা পুরো প্রক্রিয়ার একটি অংশ হতে পারে।   

গত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছর কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। একটি পদ্ধতি শুরু হলে প্রথমে তার অনেক সমস্যা থাকে। শিখনের মাধ্যমে পদ্ধতিটি একটি পরিশীলিত রূপ পায়। গত বছর শিক্ষার্থী পাওয়া নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা হয়। কয়েকবার অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। তার অন্যতম একটি কারণ ছিল দেরিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা। অনেক শিক্ষার্থী প্রাইভেট কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন। এ ছাড়া আরো অনেক সমস্যা ছিল। গত বছর অনেকে পছন্দমতো কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারেননি।

আমরা আশা করি, এ বছর এ সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব এবং একটি সুন্দর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হবে। এ কাজটি করতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জায়গা থেকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষা শেষে আবার উত্তরপত্র এনে এক জায়গায় জড়ো করা জিএসটি পরীক্ষা কমিটির পক্ষে খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু কাজটি তাদের করতে হচ্ছে এবং এ বছরও তারা দক্ষতার সঙ্গে করবে বলে আশা করছি। আমরা একদিকে যেমন চাই সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভালো ছাত্র কিংবা ছাত্রীটিকে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া, তেমনি তাঁরা যেন নিজ জেলা কিংবা বিভাগে থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। একজন শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবকের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির কথা মাথায় রেখে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বিবেচনায় সমন্বিতের বিকল্প নেই। এককভাবে পরীক্ষা নিলে শিক্ষকদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু শিক্ষকরা লাভবানের বিষয়টি মাথায় না নিয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে রাজি হয়েছেন। কেননা তাঁরা মনে করেন, নিজেদের আর্থিকভাবে লাভবানের চেয়ে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করা শ্রেয়। ভর্তি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে নিজ পছন্দের বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন তার জন্য এমন একটি পদ্ধতি বের করতে হবে, যাতে তাঁরা একটি কিংবা বড়জোর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই পছন্দমতো বিষয়ে ভর্তি হতে পারেন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে এ কাজটি করা অসম্ভব নয়। তা না হলে একটি পরীক্ষা দিয়েও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, এমন একটি পদ্ধতি আমাদের বের করতেই হবে, তা না হলে শিক্ষার্থীদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটা কমবে না।

বর্তমানে শুধু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাই নয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা গুচ্ছে পরীক্ষা নিচ্ছে। বুয়েট বাদে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একত্রে পরীক্ষা নিচ্ছে। আগামী দিনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ধরন অনুযায়ী সমন্বিত কিংবা অন্য কোনো গুচ্ছে শামিল হবে—এমনটি আশা করা যায়। লক্ষ্য যদি হয় ভালো শিক্ষার্থী নির্বাচন, তাহলে আমাদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনো এককভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা নিজেরা একত্র হয়ে একটি নতুন গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে। যেকোনো নতুন পদ্ধতিতে সমস্যা থাকবে, কিন্তু একটি পর্যায়ে এসে তা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। একটু একটু করে সমস্যা দূর করে সময়ের আবর্তে আমরা একসময় মানসম্মত পদ্ধতিতে পৌঁছতে পারব। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাও একদিন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। তখন এ পদ্ধতি নিয়ে আমাদের সমালোচনা করার তেমন কিছু থাকবে না। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশাসনের সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। ভর্তি পরীক্ষার এ পদ্ধতির সাফল্য কামনা করছি।    

  লেখক : ড. নিয়াজ আহম্মেদ, অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036318302154541