সম্পদের হিসাব দেননি ৯৫ ভাগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী - দৈনিকশিক্ষা

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনেও অনীহাসম্পদের হিসাব দেননি ৯৫ ভাগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে ৪২ বছর আগে। কিন্তু কেউ সেই নিয়ম মানেন না। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রায় ছয় মাস আগে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ৩১ ডিসেম্বর দাখিলের সময় শেষ হলেও ৯৫ শতাংশ কর্মীই এখনো হিসাব দেননি। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা জানেন না, সম্পদের হিসাব দিতে হবে।

জনপ্রশাসনসচিব কে এম আলী আজম বলছেন, নির্দেশনার পরেও সম্পদের হিসাব না দিলে অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতে পারে। এ ছাড়া সম্পদের হিসাব না দেওয়ার কারণে কেউ কোনো জটিলতায় পড়লে, সেই দায়ও তাঁর।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পালনেও অনীহা

সরকারি চাকরিতে ঢোকার সময় বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হয়। ১৯৭৯ সালে জারি হওয়া সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেওয়ার নিয়ম করা হয়। কেউ এই নিয়ম না মানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিধিমালার ১১, ১২ ও ১৩ বিধি কর্মকর্তাদের অনুসরণের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন। এরপর গত ২৪ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে বিধিমালা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি পাঠিয়ে এর অগ্রগতি জানাতে বলে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব দাখিলের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্পদের হিসাব জমা দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছিল, তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের কেউ এখনো সম্পদের হিসাব জমা দেননি।’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সম্পদের হিসাব দিয়েছেন কি না, তা জানেন না এই মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত সচিব শাহ আলম। অথচ প্রশাসন শাখায় সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার কথা। একজন কর্মকর্তা জানান, এই মন্ত্রণালয়ের কেউ এখনো সম্পদের হিসাব দেয়নি।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) গাজীউদ্দিন মোহাম্মদ মুনীর বলেন, ‘কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে—এ বিষয়টি আমার জানা নেই।’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়কে তাগাদাপত্র দেওয়ার বিষয়টি জানানোর পর তিনি বলেন, ‘তাহলে একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এই মন্ত্রণালয়ের কেউ সম্পদের হিসাব দেননি।’

মন্ত্রণালয়ের কতজন কর্মকর্তা সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন, সেই প্রশ্ন শুনেই আর কথা বলেননি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এস এম সেলিম রেজা। আবার একই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।’ এই মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, এখনো কেউ সম্পদের হিসাব দেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম বলেন, সরকারি চাকরিতে ঢোকার সময় বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে সম্পদের হিসাব দাখিল করতে হয়। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর যাঁরা নিয়মকানুন মানেন, তাঁরা পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দিচ্ছেন। এত দিন আসলে আয়কর জমা দেওয়ার একটা কপি তাঁরা জমা দিতেন।

আলী আজম বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছরে কতজন সম্পদের হিসাব দেননি, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তা দেখা হবে। আমরা একটি গ্রাফ করে যাঁরা হিসাব দেননি, তাঁদের সেখানে চিহ্নিত করব। কেউ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের হিসাব না দিলে সেই দায়দায়িত্ব তাঁর। এটাকে আমরা অভ্যাসে আনার চেষ্টা করছি। এটা যদি কেউ না দেয় এবং পরবর্তী সময়ে সম্পদের হেরফেরের কারণে মামলা বা বিভাগীয় ব্যবস্থার মধ্যে পড়েন, সেই দায়ও তাঁর, সেখানে আমাদের কোনো দায় থাকবে না।’

অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত হওয়ার ভয়

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ ছাড়া বিধিমালাতেই এটি বলা আছে। এরপরেও মানা হয় না। কারণ, এটা করা হলে অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় তাঁরা সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছেন। বিষয়টি নির্দেশনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে, কারণ যাঁরা নিয়ম মানছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—এমন কোনো দৃষ্টান্তও নেই। শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দৃষ্টান্ত থাকলে অধীনেরা সেটা অনুসরণ করতেন, সেটাও তো নেই। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া আর সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করা এক জিনিস নয়। নাগরিক হিসেবে আয়কর দিতে হয়, আর জবাবদিহির স্বার্থে সম্পদের হিসাব দিতে হয়।

 

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012641906738281