গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ আঁকড়ে আছেন। এক বছর মেয়াদি কমিটি হলেও পার হতে চলছে চার বছর। এরইমধ্যে ঢুকেছেন সরকারি চাকরিতে। এরপরও ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ও প্রভাব বিস্তার করছেন তারা।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সরকারি চাকরি করলে কেউ সংগঠন (ছাত্রলীগ) করতে পারবে না। তবে এসব বিধি বিধানের কোনো তোয়াক্কা না করেই পদ আঁকড়ে আছেন রাজধানীর সরকারি টিচার্স ট্রেনিং (টিটি) কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম দানিস ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম। দুজনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। দানিস ডেপুটি ট্যাক্স অফিসার এবং রিয়াজুল রেভিনিউ সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত।
তবে চাকরি করেও নিয়মিত আসেন কলেজ ক্যাম্পাসে। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতেও অংশ নেন। ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি হলেও ধরে রেখেছেন সিট। বিএড এবং এমএড নামে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে দুইটি আবাসিক হল রয়েছে। এমএড হলের ২০০৬ নং কক্ষে সভাপতি এবং ৩০০২ নং কক্ষে সাধারণ সম্পাদক থাকেন। তবে চাকরিতে যোগদানের পর এখন আর নিয়মিত হলে থাকেন না তারা।
এ বিষয়ে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম দানিস বলেন, আমি ওইখানে নাই ভাই। আমি এসবের সঙ্গে নাই, কোনো প্রভাব বিস্তার করতেও চাই না। কোনো কিছুই না, আমি এগুলো থেকে বিরত আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চাকরিজীবী হয়েও এখনো ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এটা অস্বস্তির। উনাদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) ওপরে কথা বলার মতো কেউ নেই। তাই কেউ কিছু বলে না।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রেভিনিউ সুপারভাইজার এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, চাকরি করে পদে থাকা অবশ্যই সাংঘর্ষিক। আমরা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের অধীনে। আমাদের যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (সজীব আহমেদ) উনি এখনো সাইনিং পাওয়ার (কমিটি অনুমোদনের ক্ষমতা) পাননি। পেলে আমাদের কমিটি আগেই হয়ে যেত। আমরা চাকরিতে যোগদানের আগে তাদেরকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
তবে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে সাফাই গাইলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম হৃদয়। তিনি বলেন, তারা তো চাকরি হওয়ার পরে নেতা হননি, নেতা হওয়ার পরে চাকরি পেয়েছেন। এরকম কোনো নিয়ম নাই যে চাকরি হলে তাকে বাদ দিতে হবে। গঠনতন্ত্রের জন্য ছাত্রলীগ না, ছাত্রলীগের জন্য গঠনতন্ত্র। চাকরি হয়েছে বলে অব্যাহতি দিয়ে তাদেরকে তো অসম্মানিত করতে পারি না।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে এমন কোথাও লেখা নাই যে চাকরি পেলে সঙ্গে সঙ্গে তার পদ ইয়ে (বাতিল) হয়ে যাবে। তারা যেহেতু চাকরি করে সংগঠনে সময় দিতে পারেন না, এ কারণে তাদেরকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
চাকরিতে যোগদান করে ছাত্রলীগের পদে থাকার বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশির সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন কলেজ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছি, সেখানে বিবাহিত এবং চাকরিজীবীদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। চাকরি করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের অব্যাহতি দেয়া উচিত।