লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় কোনো কারণ ছাড়াই জোরপূর্বক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের তিস্তা চরের পশ্চিম হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা। এছাড়া বই উৎসব শেষ হওয়ার ১৭ দিন পার হলেও এখনও শিক্ষার্থীদের নতুন বই না দেয়ার অভিযোগ করেন তারা।
গত ৫ জানুয়ারি এ ঘটনায় কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক, হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিম হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনের কারণে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় বার স্থানান্তর করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। এতদিন সেখানেই পাঠদান চলছিল। সারা দেশের ন্যায় চলতি বছরের শুরুতে বই উৎসবের দিন মাত্র ৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বই বিতরণ করে শিক্ষকেরা। তারপর থেকে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যালয়ে বসে থেকে বাড়ি ফিরে যায়। কারণ বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষকও আসেন না, শিক্ষার্থীদের বইও পাওয়া হয় না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে সময় পার করছে। তবে কোনো শিক্ষকের দেখা মেলেনি। শ্রেণিকক্ষে বই ছাড়াই বসে আছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, পহেলা জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক শুধু মাত্র চারজনকে নতুন বই দিয়ে চলে যান। এরপর আর তাদের দেখা মেলে নাই। তাই প্রতিদিন নতুন বইয়ের জন্য বিদ্যালয় আসি, আর চলে যাই।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিচালনা কমিটির সদস্যরা কোনো কারণ ছাড়াই বিদ্যালয়টি এখান থেকে অন্য স্থানে সরানোর পায়তারা করেছে। তবে স্থানীয়দের বাধায় কিছু আসবাবপত্র ছাড়া আর কোনো কিছু নিয়ে যেতে পারেনি। আর পরিচালনা কমিটির সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষকরাও বিদ্যালয় আসে না। তারা পরিচালনা কমিটির নির্ধারিত স্থানে টিনের চালায় তৈরি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী ছাড়াই বসে থেকে সময় পার করছেন।
এ বিষয়ে পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়টি আমি স্থানান্তর করি নাই। পরিচালনা কমিটির সভাপতি পাটিকাপাড়া ৬নং ওয়ার্ড থেকে ৭নং ওয়ার্ডে বিদ্যালয়টি নিয়ে নির্মাণ করছেন। এখানে আমার করার কিছু নাই। কমিটির লোকজন যেখানে বিদ্যালয় নিয়ে যাবেন আমি সেখানেই যাবো।
এ বিষয়ে পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আয়শা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওই এলাকায় তেমন কোনো শিক্ষার্থী নেই। এছাড়া এত দূরে আসতে কষ্ট হয় শিক্ষকদের। তাই আমরা বিদ্যালয়টি সেখান থেকে এখানে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিঠুন বর্মন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত আছি। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই বিদ্যালয় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কতৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।