সরকারিকরণের দাবি নিয়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন - দৈনিকশিক্ষা

সরকারিকরণের দাবি নিয়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নানা আয়োজনে শিক্ষক দিবস উদযাপন করেছেন শিক্ষকরা। রাজধানীতে শিক্ষক সংগঠনগুলো র‌্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভা করে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন করেছেন। এসব অনুষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষক সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছেন। ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষক রাজধানীর প্রেস ক্লাব ও তোপখানা রোড এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। মূলত প্রেস ক্লাব, তোপখানা ঢাকা রিপোর্টাস্ ইউনিটিতে, ফার্মগেটের নাজনীন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শিক্ষক সংগঠনগুলো বিশ্ব শিক্ষক দিবসের কর্মসূচি উদযাপন করেন।  শিক্ষক সংগঠনগুলোর কর্মসূচিগুলো শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের দাবিতে মুখরিত ছিলো।

বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে র‌্যালি ও মানববন্ধনের আয়োজন করে প্রাচীন শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। একইসময়ে মানববন্ধন করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট। এ সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপিপন্থী সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি।

বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে আলোচনা সভায় জাতীয়করণের দাবি করা হয়। অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান মূখ্য আলোচক ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বাকশিস সভাপতি অধ্যক্ষ মো. ইসহাক হোসেন। 

শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এবং করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও শিক্ষক দিবস উদযাপন করতে বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ বেলা সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি দৈনিক শিক্ষার উপদেষ্টা সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান। 

আর একই সময়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে সেমিনার করে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ)। পরে বেলা ১২টায় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস)। একই সময়ে তোপখানা র‌্যালি করে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম। পরে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটিতে আলোচনা সভার আয়োজন করে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের একাংশ। অপর অংশ আলোচনা সভা করে জাতীয় প্রেসক্লাবে।  

মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারিকরণের দাবিতে বেলা ১১টায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিতে বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. কাওছার আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আবুল কাশেমসহ অন্যান্য শিক্ষক নেতারা অংশ নেন। শিক্ষক দিবসের র‌্যালিতে শিক্ষক নেতারা মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের দাবি জানান। র‌্যালি শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শিক্ষক নেতারা অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের জন্য ৬ শতাংশের জায়গায় শিক্ষকদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কর্তন করার প্রতিবাদ জানান। এসময় শিক্ষক নেতারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে ফেরত নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবি জানান।

বেলা ১১টায় এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা অংশ গ্রহণ করেন। মানববন্ধনে অংশ নেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির  সভাপতি তালুকদার আব্দুল মন্নাফ, মহাসচিব মেসবাহুল ইসলাম প্রিন্স, বাংলাদেশ শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক বেনি মাধব দেবনাথ, সদস্য সচিব দিদার হোসেন, শিক্ষক নেতা আফজালুর রশিদ. অধ্যক্ষ আফজাল হোসেনসহ সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষক নেতারা। মানববন্ধনে নেতারা এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবি জানান। নেতারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে নিলে প্রতিবছর সরকারের আয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা। তাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা হলে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দিতে সরকারের বাড়তি কোনো টাকা খরচ হবে না বলেও দাবি করেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করতে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। সরকার চাইলেই এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুজিববর্ষেই সরকারিকরণ করতে পারে বলেও দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। 

একই সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূইয়া। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। 

বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বাবুল। মূল প্রবন্ধে গত একযুগে শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের নানা অবদানের কথা তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও করোনাকালে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষক নেতারা। অনুষ্ঠানে শত শত প্রধান শিক্ষক অংশ নেন। 

একই সময় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিউশনে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সেমিনার শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মশিউর রহমান এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম। অনুষ্ঠানে সভপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া অশিক্ষিত। তার কোনো শিক্ষা নেই। তাই তিনি শিক্ষার মর্ম বোঝেন না। মির্জা ফখরুল সাহেব শিক্ষিত লোক। কিন্তু তারা বিপদে আছেন। কারণ দলেও অশিক্ষিত ঊর্ধ্বতনদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে তাদের না উল্টোপাল্টা কথা বলতে হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।  

দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সামনে মানববন্ধন করেন বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস)। মানববন্ধনে শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবি জানান। মানববন্ধনে বাশিস সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনিসহ সমিতির শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

একইসময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে র‌্যালি করে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম। দুপুর দুইটায় সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ফোরামের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষক নেতারা শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের দাবি জানান। দুপুরে ফোরামের আরেক অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবে সেমিনার আয়োজন করে। 

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সভায় ৫ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবার দিবসটি পালন করা হয়। তবে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিভিন্ন দেশে শিক্ষকরা মোটা দাগে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপন শুরু করেন। ইউনেস্কোর অনুমোদনে প্রতিবছর পৃথক প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। চলতি বছর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে প্রতিপাদ্য, ‘শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মূলে রয়েছেন শিক্ষকরাই’। শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এদিন দিবসটি উদযাপন করা হয়। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে মঙ্গলবার যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। 

জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষকদের মর্যাদা ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, শিক্ষকদের অধিকার সম্পর্কে জানানো, মানসসম্মত শিক্ষা তথা সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং প্রবীণ শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাকে জানা ও কাজে লাগানোই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011073112487793