দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক এর সদস্য দেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ করে দিতে প্রতিষ্ঠিত হয় সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বা দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালে। সংক্ষেপে এটি ‘সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়’ নামেই পরিচিত। সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস দিল্লিতে হলেও সার্কভুক্ত অন্য ৭টি দেশেও এর আঞ্চলিক ক্যাম্পাস থাকবে। মূল ক্যাম্পাসের অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার।
১০০ একরের ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে একটা অস্থায়ী ১৪ তলা বিল্ডিংয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ইকোনমিক্স আর কম্পিউটার সাইন্স, এই দুই বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত বায়োটেকনোলজি, কম্পিউটার এপ্লিকেশনস, ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস, আইন, সমাজবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মোট ৮ বিষয়ে মাস্টার্স অ্যান্ড পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে বিশেষ ভিসা নীতির ব্যবস্থা। সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা যে কোনো ক্যাম্পাসে পড়াশুনা করার সুযোগ পাবে।ভর্তি তথ্য: সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ১১ মার্চ পর্যন্ত ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১০ এপ্রিল। ক্লাস শুরু হবে ২৬ জুলাই ২০১৬ থেকে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্কলারশিপ এবং আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বিষয়ে ৩ জন করে শিক্ষার্থী নেয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১০ ইউএস ডলার ৬৫০ রুপি বা ৮০০ বাংলাদেশি টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে নির্দিষ্ট তারিখে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করা যায়। অন্যদিকে নির্ধারিত ফরম প্রিন্ট করে হাতে পূরণ করে বাই-পোস্টেও পাঠানো যায়। ভর্তি ফি ১০ ডলার অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অথবা ব্যাংক ড্রাফট করে পাঠানো যেতে পারে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে কিংবা বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন এই ঠিকানায় http://sau.int/admissions/admission- notice-2016।
ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি: মোট ১০০ মার্কস এর ওপর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সময় ৩ ঘণ্টা। ১০০ মার্কস ভাগ করা থাকে ২ ভাগে প্রথম ভাগে থাকে ৫০ মার্কসের অবজেক্টিভ, যেখানে আবার ২৫-২৫ করে দুটি বিভাগ। একটি দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান আর অপরটি বিষয় ভিত্তিক। আর বাকি ৫০ মার্কস হলো লিখিত, যেখানে ৪/৫টি বর্ণনামূলক প্রশ্নের মধ্য থেকে মাত্র ২টির উত্তর দিতে হয়। একেকটি উত্তর ১২০০/১৫০০ শব্দের বেশি হওয়া যাবে না। আর লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নগুলো ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং টাইপ, আবার বিষয়ভিত্তিকও হতে পারে। ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে ৮টি সার্ক দেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী একই প্রশ্নের মাধ্যমে নেয়া হয়। বাংলাদেশে পরীক্ষা সেন্টার দুটি। একটি ঢাকার শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অপরটি চট্টগ্রাম। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিটি দেশ থেকে বিষয় অনুযায়ী চান্স প্রাপ্তদের এবং অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে এমফিলে ভর্তির জন্য ভাইভা দিতে হবে। সরাসরি অথবা স্কাইপে সাক্ষাত্কার দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
স্কলারশিপ সুবিধা: সার্ক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীই স্কলারশিপের সুবিধা পেয়ে থাকেন। এখানকার সবচেয়ে বড় স্কলারশিপ হলো প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ। স্কলারশিপ প্রাপ্তদের সুবিধাসমূহ বিনা খরচে পড়াশোনা, হোস্টেলে থাকা ফ্রি ও খাওয়ার ব্যবস্থা।
প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে তার নিজের দেশ থেকে প্রথম হতে হবে। নিজ নিজ সাবজেক্টে চান্স প্রাপ্তদের মূল লিস্টের প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকতে হবে। তাহলেই সরাসরি প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ পেয়ে যাবেন। এছাড়াও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১০০%, ৫০%, ২৫% পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। আগের বছরগুলোতে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তার আওতায় প্রায় সকল নন ইন্ডিয়ান শিক্ষার্থীরা ৩ ক্যাটাগরিতে স্কলারশীপ পেত। তবে এ বছর থেকে শুধু পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী প্রেসিডেন্ট, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে সার্ক সিলভার জুবিলি দেয়া হবে।
অন্যান্য সুবিধা: এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আবাসিক হোস্টেল সুবিধা। বেশ পরিপাটি এক রুমে ৪ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। রয়েছে ২৪ ঘন্টা রিডিং রুম, সুপরিসর লাইব্রেরি। বাংলাদেশ থেকে পড়তে যাওয়া সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জাহিদ ওসমানী বলছিলেন সেখানকার অনেক রকম সুযোগ-সুবিধার কথা। তিনি জানান, এখানে একাডেমিক ক্যালেন্ডার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কোনো ধরনের সেশন জট নেই।