চলতি মাসের শেষ দিকে আরও সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এরমধ্যে ১৫ হাজার ১৬৩ পদে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা প্রার্থীদের এবং ৩ হাজার ৩০০টিরও বেশি পদে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে যোগদান না করা পদগুলোতে আবেদন করা পরবর্তী প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এসব পদে নিয়োগ সুপারিশের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সায় মিলেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চলতি মাসের শেষ দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব প্রার্থীর নিয়োগ সুপারিশের ঘোষণা দেবেন। আগামী ২৭ মের পরে এসব শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা। গতকাল বুধবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিন হাজার তিন শতাধিক পদে দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ সুপারিশ আসছে :
তিন হাজার তিন শতাধিক শিক্ষক পদে দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করার প্রস্তুতি শুরু করেছে এনটিআরসিএ। এসব প্রার্থী দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেও যোগদান করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর ওই কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তিন হাজার তিনশর বেশি পদে প্রার্থীরা চূড়ান্ত সুপারিশে পেয়েও যোগদান করেননি। বিধান অনুযায়ী এসব পদে আবেদন করা মেধাতালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করা হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সায় মিলেছে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফল ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মন্ত্রী মহোদয় এ মুহূর্তে দেশের বাইরে আছেন। আমরা গত ১৬ মে এনটিআরসিএর নির্বাহী কমিটির সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করার সায় মিলেছে। চলতি মাসের শেষে মন্ত্রী মহোদয় দেশে ফিরলে এ ফল প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও জানান, চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েও যোগদান না করা পদগুলোতে প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করা হবে। টেলিটকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এমন পদ তিন হাজার তিনশর বেশি।
ভি রোল ফরম না পাঠানো প্রার্থীদের পদগুলোতে দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করা হবে কী-না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা আমাদের বার্তাকে আরও বলেন, ভি রোল ফরম না পাঠানো প্রার্থীদের সুপারিশকে চূড়ান্ত সুপারিশ বলে ধরা যায় না। তাই ওই পদগুলো খালিই থাকবে।
সম্প্রতি তৃতীয় নিয়োগচক্রে যোগদান না করা পদগুলোতে প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৭ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে এনটিআরসিএর নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা করে প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
প্রচলিত নিয়মে কোনো শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থী যোগদান না করলে সেই পদে আবেদন করা মেধাতালিকার ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়। এর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় নিয়োগ চক্রে সুপারিশ পেয়েও যোগদান না করা পদে অন্য প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপে সুপারিশ করা হয়েছিল। সে বছর ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর সেই নিয়োগচক্রে যোগদান না করা এমপিও ও ননএমপিও পদগুলোতে প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়েছিল। তাই তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা প্রার্থীরাও দ্রুত দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ করার দাবি জানাচ্ছেন।
১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক পদে হচ্ছে নিয়োগ সুপারিশ :
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল চলতি মাসের শেষ দিকে প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা। ছয় মাসের ডিপ্লোমা নিয়ে আইসিটি পদে আবেদন করা প্রার্থীরা নিয়োগ সুপারিশ চেয়ে মামলা করায় এ বিষয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতা এড়িয়ে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএর ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, এনটিআরসিএর নির্বাহী কমিটির সভায় এসব পদে নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আইসিটি শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের কেউ কেউ এ বিষয়ে মামলা করলেও আদালত নিয়োগের কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। আমরা চচ্ছিলাম সব জটিলতা এড়িয়ে নিয়োগ সুপারিশ করতে। কিন্তু এ বিষয়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মামলাটি একটি বেঞ্চে আছে, এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
তিনি আরও জানান, মামলা নিষ্পত্তি না হলেও আদালত আমাদের কাছে এ বিষয়ে যে জবাব চেয়েছে আমরা তা পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি, জবাবে আদালত সন্তুষ্ট হবেন এবং নিয়োগ সুপারিশে কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। আর মামলাটি শুনানিও হচ্ছে না। তাই, সার্বিক বিবেচনায় প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নির্বাহী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা শেষ আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানিয়েছি।
বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগ আইনি জটিলতায় আটকে ছিল। এসব পদে নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী আবেদন করেছেন। গত মার্চ মাসেই এ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল এনটিআরসিএর। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১৫ হাজার ১৬৩ শিক্ষক পদে আবেদন নেয়া হয়েছিলো। এ গণবিজ্ঞপ্তির ১৫ হাজারের বেশি পদে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। এরমধ্যে এমপিও পদ ছিলো ১২ হাজার ৮০৭টি ও ননএমপিও পদ ছিলো ২ হাজার ৩৫৬টি। এসব পদে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৭টি আবেদন পাওয়া গেছে বলে এনটিআরসিএকে জানিয়েছে টেলিটক।
ফল ঘোষণা করবেন শিক্ষামন্ত্রী :
১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ ও তিন হাজার তিন শতাধিক পদে দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ সুপারিশ নিয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান গতকাল বুধবার দুপুরে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, চলতি মাসের শেষে সুখবর পেতে পারেন প্রার্থীরা। এসব পদে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশের প্রস্তুতি চলছে। মোট সাড়ে ১৮ হাজার পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। এটি একটি বড় বিষয়, তাই আমরা চাচ্ছি মন্ত্রী মহোদয় যেন সংবাদ সম্মেলন করে ফল প্রকাশ করেন। সে রকমই পরিকল্পনা আছে। মন্ত্রী মহোদয় আগামী ২৭ মে দেশে ফিরবেন বলে জানতে পেরেছি। এরপর তিনি যেদিন সময় দেবেন সেদিনই আমারা প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করবো। ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ ও তিন হাজার তিন শতাধিক পদে দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ সুপারিশ একইসঙ্গে ঘোষণা হতে পারে বলেও জানান সচিব।
তিনি আরও বলেন, কোনো কারণে যদি মন্ত্রী মহোদয় চলতি মাসের শেষে সময় না দেন তাহলে জুনের শুরুতে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এসব প্রার্থীদেরও পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে বলে জানান তিনি।