রবিউল ইসলাম এখন মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বার্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তার বিদ্যালয় থেকে সেই একমাত্র জিপিএ- ৫ পেয়ে পাস করেছিল। আশা ছিল বৃত্তি পাবে। কিন্তু বৃত্তির ফলাফল প্রকাশ করার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে ছিল বৃত্তি না পাওয়ার খবর। এতে রবিউল, তার পরিবার এবং এলাকাবাসী অবাক হয়েছিল। কারণ, রবিউলের বৃত্তি না পাওয়ার কথা নয়। ঠিক তারই প্রমাণ মিলল পরীক্ষার সাড়ে তিন বছর পর এসে। জানা গেল রবিউল ইসলাম সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে।
বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে মো. রবিউল ইসলামকে সম্বর্ধনা দিয়েছে বার্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসমত আলী, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা খাতুন, সেই সময়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার উদ্দিন বিশ্বাস, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সহসভাপতি সেবিকা মণ্ডলসহ রবিউলের পরিবারের সদস্যরা। তাকে একটি ক্রেস্ট এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
রবিউল ইসলাম বলেন, আমি এখন জেলার সবচেয়ে নামকরা স্কুলে পড়ি। আমার বিশ্বাস ছিল আমি বৃত্তি পাব। কিন্তু রেজাল্ট পাওয়ার পর আমার মনটা ভেঙে গিয়েছিল।
‘আমার এই অবস্থা দেখে আমার বড় ভাই অনলাইনে ঘাটাঘাটি কইরা পাইছে আমি বৃত্তি পাইছি। পরে, স্যারদের জানাইছে। পরে তারা নিশ্চিত হইছে যে, আমি বৃত্তি পাইছি’।
রবিউলের বড় ভাই মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে অর্থনীতি বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কৌতুহলবশত অনলাইনে সার্চ করে দেখি তিন-চার বছর আগের বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল আছে। তারপর রবিউলের রোল নম্বর মিলিয়ে দেখি ও বৃত্তি পেয়েছে। পরে, আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানাই। তিনি শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করে ওর বৃত্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফা খাতুন বলেন, আমি তখন সহকারী শিক্ষক ছিলাম। আমাদের প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি ঢাকায় ছিলেন। বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল শিটটি শিক্ষা অফিস থেকে আনা হয়নি। এজন্য হয়তো বিষয়টি সকলের অজ্ঞাত ছিল। তবে, বোর্ডে টাঙানো রেজাল্ট শিটে রোল নম্বর পাওয়া যায়নি। সমস্যাটা আসলে কোথায় হয়েছিল বুঝতে পারছি না। শিক্ষা অফিস কিংবা আমরা শিক্ষকরা তো অবশ্যই এর দায় এড়াতে পারি না।
সেই সময়ের প্রধান শিক্ষক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) আক্তার উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমার স্ত্রী কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকায় তার ডায়ালাইসিসের জন্য তখন ঢাকায় ছিলাম। বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল শিটটি আমি আনতে পারিনি। তবে, শিক্ষা অফিসের বোর্ডে টাঙানো রেজাল্ট শিট খুঁজে দেখেছি, সেখানে ওর রোল নম্বরটি ছিল না। তখন ভেবেছি, ও অংকে ৭৭ পেয়েছে বলেই হয়তো বৃত্তি পাইনি। তবে, ওর সরকারি সহায়তার সব টাকা হিসেব করে আমি আজ ওকে দিয়েছি এবং আমি ওর পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।
এ ব্যাপারে, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, এত বড় একটি ভুল কীভাবে হলো বুঝতে পারছি না। হয়তো সেই সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাল্ট শিটটা না উঠানোর কারণেই এই বিভ্রাট হয়েছে। শিক্ষা অফিসের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো রেজাল্ট শিটে হয়তো দেখার সময়ও ভুল হতে পারে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সম্বর্ধনা জানানোতে কিছুটা কষ্ট লাঘব হয়েছে।