সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় মূল্যায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো - দৈনিকশিক্ষা

সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় মূল্যায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের কারণে এবার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ছাড়াই ওপরের শ্রেণিতে উঠবে—প্রায় এক মাস আগে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা কিসের ভিত্তিতে ওপরের শ্রেণিতে উঠবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিটি বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বলে না দেওয়ায় মূল্যায়নের কাজটি শুরু করতে পারছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এ রকম পরিস্থিতিতে একেক বিদ্যালয় একেক রকম চিন্তা করছে, কিন্তু কোনোটাই কার্যকর করতে পারছে না। অথচ চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে মাত্র দেড় মাস বাকি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও উচিত সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া, যাতে বিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী  বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও ওপরের শ্রেণিতে ওঠার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা অনতিবিলম্বে দেওয়া উচিত। তা না হলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হবে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ। এগুলোর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (৬৫,৬২০টি) শিক্ষার্থী ১ কোটি ১৪ লাখ।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি বহাল থাকবে। শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর বিদ্যালয় খোলার সম্ভাবনা খুব কম। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের শেখার বিষয়টি একেবারেই বন্ধ। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য টিভি ও বেতারের মাধ্যমে ক্লাস সম্প্রচার করা হলেও বাস্তবে সেটি খুব একটা কাজে আসেনি। পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের উদ্যোগ নিলেও সর্বশেষ ছুটির ঘোষণার (১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) কারণে সেটি সম্ভব নয়। কারণ, এরপর শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে মাত্র ১১ দিন বাকি থাকে। এই অবস্থায় প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির মূল্যায়ন এবং ওপরের শ্রেণিতে ওঠার পদ্ধতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে বিদ্যালয়গুলো। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ১১ নভেম্বর বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ব্যবস্থায় মূল্যায়ন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। তাঁরা এখনো পরিষ্কার বুঝতে পারছেন না, কীভাবে কাজটি করবেন। ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, তাঁরা বিভিন্ন রকম চিন্তা করছেন। প্রথমত, শারীরিক দূরত্ব মেনে একেকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিনের জন্য বিদ্যালয়ে এনে বিষয়ভিত্তিক মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করার কথা ভাবছেন। কিন্তু এটি করতে গিয়ে আবার কোনো শিশু যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, তখন আবার তাঁরা চাপে পড়বেন। আবার শিশুদের অনেকেই পরিবারের সঙ্গে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। আরেকটি বিকল্প চিন্তা হলো, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করে মূল্যায়ন করা। কিন্তু এটিও কতটা বাস্তবে করা সম্ভব হবে, সেটি নিয়ে তাঁরা দ্বিধায় আছেন। এ জন্য তাঁরা চাচ্ছেন সরকার থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া।

বগুড়ার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানালেন, সম্প্রতি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে এক সভায় তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষা সরাসরি দেখভাল করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তরের উপপরিচালক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। সেটি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।

মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা
মাধ্যমিকে পরীক্ষা ছাড়াই ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সিদ্ধান্ত হলেও ‘অ্যাসাইনমেন্টের’ (বিষয়ভিত্তিক কাজ) মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা জানার চেষ্টা করছে বিদ্যালয়গুলো। এ লক্ষ্যে এখন প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা হলো, শারীরিক দূরত্ব মেনে অভিভাবকেরা এসব অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবেন। এ ছাড়া অনলাইনে বা অন্য কোনোভাবেও জমা নেওয়া যাবে। তবে এখন বিদ্যালয়গুলোতে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও আনাগোনা বাড়ছে।

গত রোববার রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী স্কুলের আঙিনায় খেলাধুলা করছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া তিন ছাত্র জানাল, দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে এসেছে তারা। তাদের একজনের বাসা মগবাজারে, আরেকজনের তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে। বাসা কাছাকাছি হওয়ায় নিজেরাই স্কুলে এসেছে।

স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাসিনা মজুমদার বললেন, অভিভাবকেরাই মূলত অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসেন। কিছু শিক্ষার্থীও আসে। তবে ভিড় যাতে না হয়, সেটি খেয়াল রাখা হচ্ছে। কুরিয়ার সার্ভিস বা শিক্ষকদের ই–মেইলেও জমার ব্যবস্থা রেখেছেন তাঁরা।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076501369476318