সুপারিশকৃত শিক্ষকদের বদলি নয় কেনো - দৈনিকশিক্ষা

সুপারিশকৃত শিক্ষকদের বদলি নয় কেনো

মো. সান্ত আলী |

শিক্ষক নিয়োগে সরকারি নিয়োগের মতোই যেহেতু সকল মান বজায় রাখা হচ্ছে সেহেতু সরকারি চাকরিজীবিদের মতো শিক্ষকদেরও বদলি ব্যবস্থা চালু করা অত্যন্ত যৌক্তিক। বদলি শিক্ষকদের দাবি নয় অধিকার।  

সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য যোগ্য প্রার্থীকে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এনটিআরসিএ একজন প্রার্থীকে চূড়ান্ত সুপারিশ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে একজন প্রার্থীকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করার পর এনটিআরসিএ এর সনদ অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। উক্ত পরীক্ষার কয়েকটি পর্যায় যেমন, আবেদনকৃত প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় অতঃপর উত্তীর্ণ প্রার্থীকে বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। লিখিত উত্তীর্ণ প্রার্থীকে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষে যোগ্য প্রার্থীদেরকে সনদের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। চুড়ান্ত উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে আবার বিদ্যমান মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

অর্থাৎ, মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপে প্রত্যেক প্রার্থীকে তুমুল প্রতিযোগিতা করতে হয়। সেখানে যে যোগ্য ও মেধাবীরা বরাবরই চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্য কোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় যেই প্রতিযোগিতা হয় এই শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার প্রতিযোগিতা তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বরং এখানে যোগ্যরা অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে সফটওয়্যার বেজড পদ্ধতির মাধ্যমে চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হয়। 
মেধা তালিকায় স্থান করার পর প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ এর প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে হয়। সেখানে আবারো প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার পর একটি শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য প্রথমে প্রাথমিক সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবার ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়। পরিশেষে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য তথ্য দানকারী প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। তারপর প্রাপ্ত চূড়ান্ত সুপারিশপত্র নিয়ে পত্রে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে হয়। 

একজন শিক্ষক যোগদান পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপে কঠোর প্রতিযোগিতা করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সরকারি অন্য যেকোনো দপ্তরের চাকরির নিয়োগের ধাপসমূহের মতোই এখানেও সকল ধাপ অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এতোগুলো প্রতিযোগিতামূলক ধাপ পার হয়ে একজন শিক্ষক তার সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখে যখন মহান পেশা শিক্ষকতায় প্রবেশ করছে তখন তার আর দুঃখের সীমা থাকছে না। বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ সুবিধায় সরকারি চাকরিজীবী ও এসব অসহায় শিক্ষকদের বৈষম্য আকাশ-পাতাল। বেতন শতভাগ হলেও বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য ভাতা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। তা ছাড়া কঠিন পরিতাপের বিষয়, নেই কোনো বদলি। উল্লেখ্য, এনটিআরসিএ সুপারিশকৃত শিক্ষকদের নিজ জেলা বা বাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে নিয়োগের সুপারিশ করছে। যা নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও যন্ত্রণার। বাবা মা ও পরিবার ছেড়ে এতো দূরে এই স্বল্প আর্থিক সুবিধায় জীবন অতিবাহিত করা অনেকের জন্য একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্থ ও হতাশার কারণে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকেরা পাঠদানে পুরোপুরি মনোযোগী হতে পারছে না। এতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পাঠদানে যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে। 

বাংলাদেশের সব রকম সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে বদলী থাকলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। যা হাজারো বদলি প্রত্যাশী শিক্ষককে হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। 

তাই সরকারি চাকরীজীবিদের মতো এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু করা শিক্ষকদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে। এটি অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি ও শিক্ষকদের অধিকারও বটে। কারণ, নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির মতো সকল প্রক্রিয়াই যেহেতু প্রতিপালন করা হয়, সেহেতু সরকারি চাকরিজীবীদের মতোই এনটিআরসিএ সুপারিশকৃত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন জরুরি নয় কেন? বদলি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকরা মানসিকভাবে স্বস্তি পাবে। শিক্ষার পাঠদানের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে তারা তাদের সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে পাঠদানের গুণগত মান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সর্বোপরি শিক্ষার সার্বিক উন্নতি ত্বরানিত হবে। অতএব শিক্ষকের জীবন মান উন্নয়ন, শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠদানের সার্বিক উন্নয়ন ও শিক্ষার কার্যকরী উন্নতি সাধনে বদলি ব্যবস্থা চালু করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রইলো।  

লেখক : মো. সান্ত আলী, প্রভাষক (অর্থনীতি), এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057539939880371