মণিরামপুরের গোপিকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে মণিরামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন একই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান (৬৭)। গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে বিদ্যালয়ের সভাপতি নিতাই চন্দ্র পাল, সদস্য মো. মতিয়ার রহমান ও বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল জলিল থানায় এসে ডায়েরি করেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন আগামী ডিসেম্বর মাসে চাকরি থেকে অবসরে যাবেন। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতির যোগসাজসে বিদ্যালয়ের রিজার্ভ ফান্ডের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের নামে একটি ভুয়া কমিটি তৈরি করে নিয়ে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে পেরে বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিচালনা কমিটির মিটিং করে গত সোমবার অফিস সহকারী আব্দুল গণির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। আব্দুল গণি তার বাড়িতে গেলে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন এবং তার দুই ছেলে আব্দুল গণিকে লাঞ্ছিত করে জিম্মি করে রাখে।
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে কমিটির সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান অফিস সহকারি আব্দুল গণিকে জালাল উদ্দীনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করতে গেলে মতিয়ার রহমান এবং সভাপতি নিতাই চন্দ্র পালকে গালিগালাজসহ জীবন নাশের হুমকি দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে মতিয়ার রহমান ও সভাপতি নিতাই চন্দ্র পাল রাতে মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের সহযোগিতায় চার ঘন্টার পর আব্দুল গণিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
সভাপতির অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে এলাকায় তোড়পাড়ের সৃষ্টি হয়। জালাল উদ্দীন ও তার দুই ছেলে বেপরোয়া হয়ে সভাপতি নিতাই এবং সদস্য মতিয়ারকে জীবন নাশের হুমকি অব্যাহত রাখায় থানায় এ ডায়েরি করেন।
শিক্ষক আব্দুল জলিল, সিনিয়র শিক্ষক ইমরান আলী, ওয়াজেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, গত ২০বছর আগে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ের নামে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীনের কাছ থেকে ১২শতক জমি ক্রয় করেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন বিদ্যালয়ের নামে সেই জমি বুঝিয়ে দেননি। এছাড়া বিদ্যালয়ের নামে ২২ শতক চাষযোগ্য জমি সাবেক সভাপতি আব্দুল আজিজ সরদার এবং প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন ওই গ্রামের আলী আকবর নামের এক ব্যক্তির কাছে ৪০ হাজার টাকায় বন্ধক রেখে দেয়। যা আইন সম্মত নয় বলে দাবি করেছেন বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল আজিজ সরদার এবং প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন ২৪ লাখ টাকা নিয়ে দু’জন শিক্ষককে নিয়োগ দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। তারা বিদ্যালয়ের কর্মরত থাকলেও আজও পর্যন্ত সেই ২৪ লাখ টাকার হিসাব দেননি জালাল উদ্দীন। বিষয়টি নিয়েও বর্তমানে জোরালো হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির একটি অভিযোগ পত্র হাতে পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।