সেশনজট শিক্ষার্থীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধক - দৈনিকশিক্ষা

সেশনজট শিক্ষার্থীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মহামারি করোনার প্রকোপ এড়াতে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া পেছাতে পেছাতে আজ প্রায় এক বছর শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে দূরে। করোনার এই অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে যে মুখ থুবড়ে পড়েছে তা নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত অনলাইন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা চালু রেখেছে। অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু সুফলদায়ক তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, অনেকের মতে অনলাইন এই ক্লাসগুলোর মাধ্যমে অন্তত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর মনোযোগী রাখা সম্ভব হচ্ছে, এতে করে সেশনজটের কবল থেকেও শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা যাবে বলেই অনেক শিক্ষক, অভিভাবক প্রত্যাশা করছেন। মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়। , উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে সেশন জটকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। মহামারি করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় একটু জট পড়বে—এটি পূর্ব-অনুমেয়; কিন্তু মহামারি পূর্ববর্তী সময়েও উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নিয়ে শিক্ষার্থীদের সরব হয়ে ওঠার ঘটনা মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রতিষ্ঠান সেশনজটমুক্ত বলে দাবি করলেও, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো বিভাগের ছাত্ররা সেশনজট নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আছেন।

উচ্চতর শিক্ষালাভের আশায় ভর্তি হওয়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাই মূলত সেশনজট নামক ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নিরসনে যখন সমাধানের কথাবার্তা চলে, তখন শিক্ষকেরা কেবল একে অপরকে দোষারোপ করেই দায় সারার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে অনেক মেধাবী, চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীর জীবন সেশনজট নামক সময়ব্যাধিতে আটকা পড়ে যায়, থমকে যায় তাদের ভবিষ্যতের সব পরিকল্পনা।

শিক্ষাব্যবস্থায় সেশনজট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। সেশন জটের কারণে বাংলাদেশের প্রচলিত চাকরি প্রতিযোগিতায় জটে পড়া শিক্ষার্থীরা অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করতে এসব শিক্ষার্থীর অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি সময় লাগলেও, তাদের শিক্ষাবর্ষ একই থাকে। অর্থাত্ স্নাতক শেষ করতে জটে পড়ে শিক্ষার্থীদের এক-দুই বছর বা তারও অধিক সময় অন্যদের থেকে বেশি লাগে। ফলে একদিকে যেমন তাদের চাকরি প্রত্যাশায় বয়সের বঞ্চনায় পড়তে হয়, তেমনি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ উপার্জনের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপ এবং সন্তানের প্রতি পরিবারের আস্থাহীনতা প্রকট হতে থাকে, যা একজন শিক্ষার্থীকে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত করে।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর জাতির এই মেরুদণ্ড সোজা রাখতে শিক্ষাব্যবস্থায় সেশনজট অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধক, একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যেরও কারণ। সেশনজটের দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একেবারেই সমীচীন নয়, বরং এটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ, অনুষদ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার নিদর্শন মাত্র। শিক্ষকের সংকট, শ্রেণিকক্ষের সংকট, সক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির দায় প্রশাসন কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। একইভাবে গুটিকয়েক শিক্ষকের অদক্ষতা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট বিভিন্ন বিভাগের সেশন জটের কারণে শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্, সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নের সমাধি ঘটুক, এটা কোনো শিক্ষার্থী এবং সচেতন অভিভাবক কখনো প্রত্যাশা করে না।

তাই প্রত্যাশা থাকবে, শিক্ষার্থীরা যাতে সেশনজট নামক বৈষম্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার ভবিষ্যত্ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না ভোগে, সেদিকে প্রত্যক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসন, শিক্ষা খাতে নিয়োজিত দায়িত্ববান কর্মকর্তা এবং সম্মানিত শিক্ষকেরা সুদৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চতর শিক্ষায় এমন একটি পরিকল্পনা হাতে নিবেন, যেটি হবে সেশনজট মুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব এবং গবেষণানির্ভর।

 

লেখক : আকিজ মাহমুদ, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038871765136719