জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর
মানুষ বেকুব চুপ, হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান
নিজেই তাজ্জব তুমি–একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়
ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না
সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷
বাংলা সাহিত্যজগতে সৈয়দ শামসুল হকের পরিচয় সব্যসাচী লেখক হিসেবে। দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং নাটকসহ শিল্প-সাহিত্যের নানা অঙ্গনে। বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি-বিকার সবই খুব সহজ কথা ও ছন্দে উঠে এসেছে তার লেখনীতে। আজ প্রথিতযশা এই লেখকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুার্ষিকী।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ শামসুল হক।
১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। তার অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে, খেলারাম খেলে যা, নিষিদ্ধ লোবান, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, বারো দিনের শিশু, তুমি সেই তরবারি, কয়েকটি মানুষের সোনালি যৌবন ও নির্বাসিতা।
সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে– একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নুরুলদীনের সারাজীবন সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।
এ সব্যসাচী লেখক নাটকীয়তায় ভরা তারুণ্যে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে মুম্বাই পালিয়ে যান। সিনেমা প্রোডাকশন হাউজের সহকারী হিসেবে বছরখানেক কাজ করার পর ঢাকায় ফিরে আবারও লেখাপড়া শুরু করলেও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তিনি বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। যেমন– মাটির পাহাড়, তোমার আমার, কাচ কাটা হীরে, বড় ভালো লোক ছিল ইত্যাদি। তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।
সৈয়দ হক প্রথিতযশা লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হককে বিয়ে করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, গৌরবের অহংকার নিয়ে তার সাহিত্য রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক ধারার সাহিত্যিক হিসেবে কাল থেকে মহাকালে ব্যাপ্ত থেকে এক অনুপ্রেরণার উৎস।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সৈয়দ শামসুল হক মারা যান।