অনেক অভিযোগ থাকার পরও নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন কুমারপাড়া হিলোচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন মিয়া। তার বিরুদ্ধে স্কুল ফাঁকি দেয়া, স্কুলে গিয়েও কিছু সময় নানা অজুহাতে চলে যাওয়াসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম বলছেন অন্য প্রধান শিক্ষকেরা।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাজহারুল ইসলাম শুক্রবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এরআগে জাতীয় শিক্ষা পদক ২০২২ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করা হয়। এতে কুমারপাড়া হিলোচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন মিয়া উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন।
এদিকে এ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলার দুজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, কুমারপাড়া হিলোচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন মিয়ার যোগদান ২০১৭ সালের নভেম্বরে। দুই মাস চাকুরি করার পর ডিপিএড করতে চলে যান ময়মনসিংহে। দেড়বছর পর ডিপিএড শেষে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে তিনি স্কুলে যোগ দেন। পরে প্রায় দুই বছর করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকে। করোনার বন্ধ শেষে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ফের তিনি অন্য একটি প্রশিক্ষণে চলে যান তিন মাসের জন্য। এই প্রশিক্ষণ শেষে চলতি বছরের মার্চে স্কুলে যোগদান করেন। এতে তার চাকুরির বয়স প্রায় পাঁচ বছর হলেও বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছেন মাত্র ১২ মাস।
বিদ্যালয়ের উপস্থিতি খাতা ও অন্যান্য কাগজপত্র অনুয়াযী, চলতি বছরের ছয় মাসের (মার্চ-আগস্ট) মধ্যে ২৪ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করেন। ১৪ দিন মেডিকেল ছুটি ভোগ করেন। যদিও একজন শিক্ষকের বছরে ২০ দিন নৈমত্তিক ছুটি ভোগের বিধান রয়েছে। এছাড়া বন্যার সময় ছাড়াও অন্যান্য সময় স্কুলে না এসেও উপস্থিত খাতায় স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের মুভমেন্ট খাতায় দেখা গেছে, গত আগস্ট মাসে নানা অজুহাতে ১৩ দিন মুভমেন্ট লিখে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এখানেও একই বিষয়ে একাধিকবার মুভমেন্ট লিখেছেন তিনি। বিদ্যালয়ে না আসা এবং এলেও নানা অজুহাতে চলে যাওয়ার কারণে অভিভাবকরা সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
গত আগস্টে ৬৪ জন অভিভাবক মিলে কুমারপাড়া হিলোচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে নানা অজুহাতে স্কুল ফাঁকি দেয়া, বিদ্যালয়ে এসেও বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে চলে যাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন প্রধান শিক্ষক মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীরা জানান, প্রধান শিক্ষক মামুন মিয়া থাকেন ময়মনসিংহে। সেখান থেকে এসে বারহাট্টায় স্কুল করেন। সে কারণে নিয়মিত তিনি আসেন না। এছাড়া যাওয়ার সময় ট্রেন ধরার কারণে দুপুরেই নানা কারণ দেখিয়ে স্কুল থেকে চলে যান।
বারহাট্টা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রহুল আমিন বলেন, যথাযথভাবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। ইউএনও স্যার এ যাচাই বাচাইয়ে উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তদন্ত করছে। এতে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধান শিক্ষক মামুন তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা, ভাইভাসহ বেশ কিছু নিয়ম আছে। এসব কিছুতে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। নিয়মগুলো যথাযথভাবে মেনেই তাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করা হয়েছে। শিক্ষক মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে যদি স্কুল ফাঁকি দেয়া বা আরও অন্য কোন অভিযোগ থাকে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।