করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কিন্তু চিন্তার শেষ নেই ঠাকুরগাঁওয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী শিশু শরীফ আলীর। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় মাধ্যমিকের কোনো বিদ্যালয়েই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেনা সে। চোখে আলো না থাকায় সমস্ত পৃথিবীই অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠাকুরগাঁওয়ের মুন্সির হাট এলাকার মাদরাসাপাড়ার শরীফ কাছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের এক অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান শরীফ। মাত্র তিনবছর বয়সে রোগাক্রান্ত হয়ে চোখের জ্যোতি হারায় সে। তার মা বাবা দেশে ও ভারতে চিকিৎসা করান। কিন্তু টাকার অভাবে ভারতে উন্নত চিকিৎসা শেষ করতে পারেন নি তার পরিবার।
শরীফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পরিবার ও সমাজের বোঝা। বোঝা হয়ে আমি থাকতে চাই না। তাই পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রথমে স্থানীয় সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও পরবর্তীতে সমাজ সেবা কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বহুবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হতে পারছি না। এরই মধ্যে প্রায় আট মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। সবাই আশ্বাস দিলেও কেউই তার ভর্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেনা।’ স্কুলে ভর্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কমনা করেছে সে।
শরীফের বাবা রমজান আলীর অভিযোগ, জেলা প্রশাসক নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই চলতি বছরের জুলাই মাসে গোপনে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বিভিন্ন স্কুলে অর্ধশত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। অথচ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভর্তির কোটা ও নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানের শিক্ষার ক্ষেত্রে কারো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তিনি।
শরীফের মা শফুরা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আমার মৃত্যুর পর শরীফ অসহায় হয়ে পরবে। কেউই তার পাশে থাকবে না। তাই লেখাপড়া জানা থাকলে ভবিষ্যতে আর যাই হোক তাকে ভিক্ষা করে চলতে হবে না। তাই সন্তানের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কমনা করেন তিনি।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আল মামুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হোস্টেলে শরীফ ভর্তি রয়েছে। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় হোস্টেল বন্ধ রয়েছে। হোস্টেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও জনবল সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে শরীফের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে চেষ্টা চলছে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিযুষ কান্ত রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ থাকলেও এর জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক ও উপকরণ সুবিধা নেই। বিদ্যালয়ে যে চারজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে তাদেরও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শরীফের ভর্তির বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মো. আলাউদ্দীন আল আজাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে যে দুটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে তার সভাপতি জেলা প্রশাসক। ভর্তির বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দেন তিনি।
জানা গেছে সরকারি তথ্য অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট ১ হাজার ৬৬৮ জন ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী’ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ এবং নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।