স্কুলড্রেস তৈরির একচেটিয়া ব্যবসা চলবে না - দৈনিকশিক্ষা

স্কুলড্রেস তৈরির একচেটিয়া ব্যবসা চলবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষার্থীদের পোশাক বানানোসংক্রান্ত এক মামলায় রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রতিযোগিতামূলক বাজার মানার আদেশ দিয়েছেন প্রতিযোগিতা কমিশন। আদেশ অনুযায়ী, একক প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে ন্যূনতম তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পোশাক বানাতে হবে। এই বাছাই কার্যক্রমে দরজির দোকান নির্বাচনের জন্য দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এর আগে স্কুলের পোশাক, রং, নকশা, মনোগ্রাম সম্পর্কে অভিভাবকদের জানাতে হবে। এরপর মনোনীত পোশাক নির্বাচিত তিনটি দরজি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দিতে হবে।

প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরির লক্ষ্যে স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের করা এক মামলায় আজ বুধবার এই রায় দেওয়া হয়।

একই কমিশনে শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরির একচেটিয়া ব্যবসার আরেকটি অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মামলার রায় ধার্য করা হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি।

রামপুরায় অবস্থিত রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরির নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান খিলগাঁও তালতলা মার্কেট এলাকার সুরভী টেইলার্স। অভিযোগ ছিল, ওই টেইলার্স থেকে শিক্ষার্থীদের পোশাক বানানো বাধ্যতামূলক। অন্য কোনো টেইলার্স থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা পোশাক বানাতে পারত না।

কমিশনের উপসচিব মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে অসম প্রতিযোগিতা কমিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করা এই কমিশনের কাজ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অসমতাবিষয়ক অভিযোগ এলে কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে মানুষের আরও সচেতন হওয়া দরকার।

রাজধানী আইডিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী আছে। পোশাক তৈরির জন্য তারা ওই টেইলার্স নির্ধারণ করেছে। একেকটি পোশাকের জন্য ৯০০ টাকা করে নেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই টেইলার্স থেকেই বিদ্যালয়ের পোশাক বানাতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মামলার আদেশে বলা হয়েছে, এই মামলায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সুরভী টেইলার্স—এই দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিযোগিতাবিরোধী চুক্তিসংক্রান্ত আইনের ধারা ১৫-এর উপধারা ১-এর বিধান লঙ্ঘিত হয়েছে।

কমিশনের রায় দেওয়া শেষে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ ছিল, রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের পোশাক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বানাতে হতো। এটি প্রতিযোগিতামূলক করতে রায় দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকেরা যাতে তাঁদের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান বা জায়গা থেকে পোশাক তৈরি করতে পারেন, সে জন্য এই রায় দেওয়া হয়েছে। স্কুলের ড্রেস কোড মেনে যেন এই ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের।’

আজকের মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘সুরভী টেইলার্স থেকে পোশাক বানানো নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। এটা বাধ্যতামূলক ছিল না। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রতিযোগিতা কমিশন বলেছে, একটি নয়, একাধিক টেইলার্সের মাধ্যমে পোশাক বানাতে। কমিশন যা বলেছে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।’

পোশাকের কাপড়, রং, নকশা ও মনোগ্রাম ঠিক করতে অভিভাবকদের অবহিত করা, মনোনীত পোশাকের নমুনা নির্বাচিত তিনটি দরজি বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে, এ আদেশের আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো তা প্রতিবেদন আকারে ৩০ মার্চের মধ্যে জমা দিতে আদেশ দিয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশন।

একই দিনে প্রতিযোগিতা কমিশনে ছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরির আরেকটি মামলার শুনানি। শুনানি শেষে কমিশন বিবাদী স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পোশাক বানানোর দায়িত্বে থাকা মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজকে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টার্নওভার ও মুনাফাসংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে বলেছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে করা এই মামলাও ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বরে প্রতিযোগিতা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে দায়ের করে। মামলায় পাঁচ দিন শুনানি হয়েছে।

মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ হাজার পোশাক বানাতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীতে। তবে কোনো কার্যালয় নেই। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ১ হাজার ২০০ টাকা এবং উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পোশাকের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা রাখা হয়।

মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম মোল্লার দাবি, ২০০৩ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে দরপত্রের মাধ্যমে তিনি ভিকারুননিসা স্কুলের পোশাক তৈরির কাজ পান। এরপর আর দরপত্র হয়নি। তবে তিনি এই কাজ প্রতিবছর পাচ্ছেন। টার্নওভার, মুনাফাসহ কিছু তথ্য প্রতিযোগিতা কমিশন চেয়েছে। এসব তথ্য সময়মতো তিনি জমা দেবেন।

এই মামলা প্রসঙ্গে প্রতিযোগিতা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কমিশনের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা হচ্ছে গত তিন বছরের যে টার্নওভার ১০ শতাংশসহ প্রতিষ্ঠানের মোট মুনাফার তিন গুণ। 

ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ এই হিসাব কমিশনে জমা দিতে বারবার সময় নিচ্ছে। এই হিসাব পেলেই কমিশন রায় দেবে।’

বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরিতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠিত হয়। অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন আনাই এর লক্ষ্য।

কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সাধারণের পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণেও এই কমিশন কাজ করে। ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইনটি হয়। এর আগে ১৯৭০ সালে করা মনোপলিস অ্যান্ড রেসট্রিকটিভ ট্রেড প্র্যাকটিস অরডিন্যান্স দেশে বলবৎ ছিল। গত চার বছরে প্রতিযোগিতা কমিশন তিনটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন মামলা বিচারাধীন আছে নয়টি।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038092136383057