স্মার্টফোনমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই - দৈনিকশিক্ষা

স্মার্টফোনমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই

আবু সালেহ মো. সায়েম |

প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার বেড়েই চলেছে। মোট স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর অন্তত ৬০ শতাংশ স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্রছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি যোগাযোগের জন্য এ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হলেও প্রভাব পড়ছে তাদের পড়াশুনার ওপর। ক্লাস চলাকালীন ইনকামিং-আউটগোয়িং কল, ফেসবুক-টুইটারের মতো শতাধিক সামাজিক বন্ধনের বন্ধুত্বে লিপ্ত হয়ে অমনোযোগী থাকা, রাতভর কম রেটে কথা বলার সুযোগ পেয়ে বাবা-মার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করা, ইন্টারনেটের প্যাকেজ রেটের সুবিধা নিয়ে দিনরাত আনলিমিটেড ডাউনলোড করাসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে ছাত্রসমাজ, বিশেষ করে কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা।

শিক্ষার্থীরা মেমোরিকার্ড সমৃদ্ধ স্মার্টফোনে বইয়ের স্টিল ছবি নিয়ে আসছে পরীক্ষার হলে। সময় দেখার নাম করে মোবাইল ফোনের ইমেজ ভিউয়ার জুম করে দেখে নিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টস বা চিত্রগুলো। বস্তুত নকল করার আধুনিক মাধ্যম হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে স্মার্টফোনকে। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে বাথরুমে যাওয়ার নাম করে পরীক্ষার কক্ষ থেকে বেরিয়ে ফেসবুকের ওয়ালে সার্কুলেশন করছে। ছোট স্পিকার কানে লাগিয়ে ওয়ারলেস কানেকশনে উত্তর চেয়ে নিচ্ছে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে। নকল করার মতো অপরাধ থেকে বাঙালি যখন মুক্ত হওয়ার পথে, ঠিক তখন স্মার্টফোনের বদৌলতে নকল প্রথা ফিরে এসেছে মহামারী আকারে।

স্মার্টফোনের কারণে শিক্ষার্থীরা চুরি বিদ্যায়ও পারদর্শী হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোনের ব্লুটুথ ডিভাইসটি অন করে আপনার সব তথ্য, ভিডিও, সেভ করা নম্বর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে অনায়াসেই। শুধু তাই নয়, ব্লুটুথ ডিভাইস চালু করে আপনার মেসেজ অপশন থেকে মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছে অন্য কারও ফোনে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় স্মার্টফোন আবিষ্কারে জীবনযাত্রার মান যতটা বেড়েছে, ঠিক ততটাই অনাচার, মিথ্যাচার ও অপরাধ বেড়েছে। স্মার্টফোনের যথাযোগ্য ব্যবহারে যোগাযোগ যতটা সহজ হয়েছে তেমনি শর্ট মেসেজ, মাল্টিমিডিয়া মেসেজসহ নানারকম অপকর্ম ও কুকর্মের প্রসার ঘটিয়েছে। যে দেশের মানুষ মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, সে দেশে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কৌশলে মানুষের কষ্টার্জিত উপার্জন চুষে নিচ্ছে। টাকা মিলিয়ে যাচ্ছে নেটওয়ার্কের অদৃশ্য ফ্রিকোয়েন্সিতে।

সম্প্রতি আমাজন জঙ্গলে এক প্রকার প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা অমাবস্যার রাতে দল বেঁধে আত্মহত্যা করে। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের মতোই। ইন্টারনেট (সব ধরনের ইনফরমেশন থাকে) আবিষ্কারের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষকে সহায়তা করা। অথচ সার্ভার কাউন্ট করলে দেখা যায়, নিষিদ্ধ সাইটগুলোয় উপচেপড়া ভিড়, ভালো শিক্ষণীয় সাইটগুলোয় ক্লায়েন্ট সংখ্যা অতি নগণ্য। শিক্ষার্থীরা সময় ও অর্থ নষ্ট করে জাতিকে কোনদিকে ধাবিত করছে, তা তারা নিজেও জানে না। সম্প্রতি ফেসবুকে ভিডিও সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম চালু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এর পেছনে সময় নষ্ট করছে রাতের পর রাত। সেবা দেয়ার নাম করে বড় বড় মোবাইল কোম্পানিগুলো বাঙালিকে বুকে টেনে নিলেও তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন। দেশের অর্থ বাইনারি ডিজিট ১ থেকে ০-এর মতোই মিলিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে উন্নত কোনো রাষ্ট্রে, নয়তো বিদেশি কোনো ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। টিভি চ্যানেলে বড় বড় কনটেস্টে কোনো কোনো কোম্পানি স্পন্সর হলেও টাকাগুলো আমাদের কাছ থেকেই নিয়ে থাকে। আমরা হয়তো ভাবি, আমার একটা মেসেজে কত টাকাই বা খরচ হয়, কিন্তু আমার মতো অন্তত ১০ কোটি বাঙালির হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে, তা কি আমরা ভাবি?

স্মার্টফোন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলেও শখের বশবর্তী হয়ে শিক্ষার্থীরা এর অপব্যবহার যেভাবে শুরু করেছে, এতে তারা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে মারাত্মক বিপর্যস্ত হচ্ছে। সমাজ থেকে তারা বিছিন্ন হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থী যেন আটকে যাচ্ছে ২-৩ ইঞ্চির ছোট্ট একটি মনিটরে। পড়ালেখা বাদ দিয়ে তার চিন্তা চেতনা, যোগাযোগ, বন্ধুত্ব- সবকিছুর মূল স্মার্টফোন। এ কালস্রোত থামানো না গেলে মরণব্যাধির চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ- ‘দেশের সকল পরীক্ষা কক্ষে মোবাইল ও ইলেকট্রুনিক যন্ত্র ব্যবহার নিষেধ।’ এমন নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কর্তৃপক্ষ কি পেরেছেন পরীক্ষা কক্ষ স্মার্টফোনমুক্ত রাখতে? মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়া ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনের মতোই শিক্ষাঙ্গন স্মার্টফোনমুক্ত করার দাবি সব অভিভাবক ও সচেতন জনগণের। শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষৎ গড়তে শিক্ষাঙ্গনে স্মার্টফোনের ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এজন্য শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা

 

 

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036768913269043