হঠাৎ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা অনুমোদন - দৈনিকশিক্ষা

হঠাৎ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

হঠাৎ ১৭ শর্তে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস চালুর অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘মোনাস কলেজ (অস্ট্রেলিয়া) স্টাডি সেন্টার, বাংলাদেশ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদিও বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্টাডি সেন্টার অবৈধভাবে পরিচালিত শাখাগুলোর বিরুদ্ধে পিএইচডিসহ নানা সনদ বিক্রির অভিযোগ আছে। এ পরিস্থিতিতে হঠাৎ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেশের উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বাড়াবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বিদেশি প্রতিষ্ঠানটির শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদনের আদেশ জারি করেছে। 

জানা গেছে, প্রশ্নবিদ্ধ বিদেশি স্টাডি সেন্টারটির উদ্যোক্তা এসটিএস গ্রুপের অ্যাডুকো বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও সন্দিপ অনন্ত নারায়ণ। 

দেশে সরকারি-বেসরকারি দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের অনুমোদন দেয়া হলো। যদিও বর্তমান সরকার প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার  বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ আছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি স্টাডি সেন্টারের বৈধতা দেয়ায় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও নৈরাজ্য আরও বেড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনদ বিক্রি করা ৫৬টি অবৈধ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছিল ইউজিসি। জনস্বার্থে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সনদ বিক্রিতে অভিযুক্ত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার বৈধতা দেয়ার উদ্যোগ

চলছে অনুমোদনহীন বিদেশি ভার্সিটির স্টাডি সেন্টার

পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মত!

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ইউএসএ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেদার পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রি করছে বলে একটি সংস্থা ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব শামিমা বেগম স্বাক্ষরিত ‘মোনাস কলেজ (অস্ট্রেলিয়া) স্টাডি সেন্টার, বাংলাদেশ’এর অনুমোদনের আদেশে মোট ১৭টি শর্ত দেয়া হয়েছে।

শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্টাডি সেন্টার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনার বিধিমালা, ২০১৪ এ বর্ণিত সকল বিধি-বিধান ও শর্ত মেনে চলবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ২৫ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা ও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান হয় এমন পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে। স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজস্ব অথবা ভাড়া ভবনে কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা থাকতে হবে। পাঠদানের জন্য পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি ফি, টিউশন ফি, ক্রেডিটের সংখ্যা, সেমিস্টারের অ্যাক্টিভিটি ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ ধার্য করা অর্থের মধ্যে উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুপাতিক অংশ হারে স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিভাজিত হতে হবে।

কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তিন সদস্যের সমন্বয়ে একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকতে হবে। পাঠ্য তালিকায় কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলে প্রতি পাঁচ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি কম্পিউটার ও প্রাসঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদনের শর্ত যথাযথ প্রতিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। 

দেশে বর্তমানে ১০৭টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেয়া হল। ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা-২০১৪’ প্রণয়ন করা হয়েছিল অতিগোপনে ছয় বছর আগে।

জানা যায়, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অতি গোপনে বিধিমালাটি জারি করা হয়েছিল। শাখা ক্যাম্পাস ও স্টাডি সেন্টার করতে অসংখ্য উদ্যোক্তার চাপ অনেক অগের। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিকদের চাপে ওই বিধিমালা স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বিধিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে ইউজিসির ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে একটি সভা করা হয়। এরপর বিধিমালা সংশোধনের জন্য ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। কিন্তু সংশোধিত নীতিমালা জারির আগেই হঠাৎ বৈধতা দেয়া হলো বিদেশি স্টাডি সেন্টার।

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধভাবে পরিচালিত শাখা বা স্ট্যাডি সেন্টারগুলোর রয়েছে একটা মোর্চা। এদের নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষা মাফিয়া ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কতিপয় বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা। 

কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে গত কয়েকবছরে যুক্তরাজ্য ও অস্টেলিয়াতে প্রমোদ ভ্রমণ করে এনেছেন এ ধরনের মাফিয়ারা। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন দিতে ব্যাপক লেনদেনও হয়েছে। বারবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টাডি সেন্টার অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে একাধিকবার কঠোরভাবে ইউজিসিকে সতর্ক করে। এমনকি স্টাডি সেন্টারের বিধিমালাও প্রণয়ন করা হয় শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের আবেদনকারীদের ইচ্ছে মতো। তবে, তা স্থগিত করেছিল মন্ত্রণালয়।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের আবার বিধিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বিধিমালা সংশোধনের আগেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও বেশ কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দেয়া একদমই যুক্তিসঙ্গত হয়নি। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040910243988037