করোনা সংক্রমণের কারণে দেড় বছর বন্ধ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও বাস চলাচলসহ সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। শুধু অনলাইনে ক্লাস চালু রয়েছে। তবে সবকিছু বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের হল ভাড়া, বাস ভাড়া, ইন্টারনেটসহ সব ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এভাবে ভাড়া নেওয়া সম্পূূর্ণ অনৈতিক। তাই তারা দাবি জানিয়েছেন, হল ভাড়া, বাস ভাড়াসহ মওকুফযোগ্য সব ধরনের ফি মওকুফ করা হোক। উপাচার্য বলছেন, শিক্ষার্থীদের হল ফি ছাড় দিতে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাসে ১০০ টাকা সিট ভাড়া দিতে হয়। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, বাস ভাড়া, ইন্টারনেটসহ আনুষঙ্গিক ফি বাবদ বিজ্ঞান শাখার অনুষদগুলোতে বার্ষিক ১ হাজার ৭৩৪ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য শাখার অনুষদগুলোতে ১ হাজার ৭১০ টাকা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। এসব ফি দিয়ে প্রতিটি বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হয়। এর সঙ্গে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ফি বাবদ আরও ১৬০ টাকা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের আরও ১৪০ টাকা পরিশোধ করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও হিসাব শাখার তথ্যমতে, শিক্ষার্থীদের বছরে মাসিক বেতন হিসেবে ১২০ টাকা (শুধু বিজ্ঞান শাখার অনুষদগুলোতে ১৪৪ টাকা), বাস ভাড়া ৩৬০, ক্রীড়া পরিষদ ফি ২০০, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি ১০০, জাতীয় ও অন্যান্য দিবস উদযাপন ফি ১০০, ইন্টারনেট ফি ১৮০, গ্রন্থাগার উন্নয়ন বাবদ ১০০, গ্রন্থাগার ও সেমিনার বই ক্রয় বাবদ ১০০, কম্পিউটার সেন্টারে ডাটা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বাবদ ৭৫ এবং ইন্টারনেট সংযোগ ও রক্ষণাবেক্ষণ ফি হিসেবে দিতে হয় ১৫০ টাকা। এ ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রী তহবিল ফি ২০ টাকা, ছাত্র সংসদ ফি ১৫, খেলাধুলা চাঁদা ৫০, পত্রিকার চাঁদা ১০, ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ তহবিল ফি ৩০, রোভার স্কাউট ও রেঞ্জার ফি ২০, সংস্কৃতি ফি ২০, বিএনসিসি ফি ৩০ এবং টিএসসিসি ফি বাবদ ৩০ টাকা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা হলে থাকেননি। বাসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ সেবাও গ্রহণ করেননি তারা। তাই শিক্ষার্থীরা হল ভাড়া, বাস ভাড়ার পাশাপাশি অন্যান্য ফি (যেগুলো শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করেননি) মওকুফের দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মহব্বত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে শিক্ষার্থীরা এত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সেবা গ্রহণ করেনি। হল বন্ধ থাকায় এখন শিক্ষার্থীদের বাইরে মেসে থাকা লাগছে। সে জন্য তাদেরকে আলাদা খরচ গুনতে হচ্ছে। সেবা গ্রহণ না করার পরও হল ভাড়া, বাস ভাড়াসহ অন্যান্য ফি নেওয়া অনৈতিক। করোনা মহামারির কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের এসব ফি মওকুফ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র আল ইয়াসিন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে আমার অনার্সের সার্টিফিকেট ওঠানো দরকার। সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে গেলে বলা হয়েছে হল ভাড়ার ক্লিয়ারেন্স স্লিপ নিয়ে যেতে। করোনার আগে আমার কয়েক মাস ভাড়া বাকি ছিল। করোনার বন্ধ সময়ের ১৮ মাসের ভাড়া বাকি হয়েছে।