হাইব্রিড শিক্ষা পদ্ধতিতে পাঠদান হবে, কমছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম - দৈনিকশিক্ষা

হাইব্রিড শিক্ষা পদ্ধতিতে পাঠদান হবে, কমছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্কুল-কলেজে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম কমে আসছে। অদূর ভবিষ্যতে সপ্তাহে ছয় দিনের পরিবর্তে দুইদিন ক্লাসরুমে পাঠদানের চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা প্রশাসন। বাকি চারদিন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে পাঠদান হবে। এতে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যাতায়াত ভোগান্তিও কমে আসবে বলে মনে করছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। যদিও আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন যে শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে সেখানে সপ্তাহে দুদিন ছুটি রাখা হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে ছাপা বইয়ের পরিবর্তে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে ‘ট্যাবলেট কম্পিউটার’ (ট্যাব) বিতরণের ব্যবস্থা করার চিন্তাভবনা চলছে। একটি ‘ট্যাব’ কমপক্ষে তিনবছর সহজেই ব্যবহার করা যায়। এজন্য ২য়, ৫ম, ৮ম ও ১১তম শ্রেণীতে ‘ট্যাব’ দেয়া শুরু হলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে ‘ট্যাব’ পৌঁছে দেয়া যাবে বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন। আর ‘ট্যাব’ ব্যবহারের জন্য রাষ্ট্রায়াত্ত ‘টেলিটক ও বিটিসিএল’র মাধ্যমে সুলভ ‘শিক্ষা ইন্টারনেট প্যাকেজ’ও চালু করা যেতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১২তম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাস ও বিভাগের জন্য পৃথকভাবে মোট ২৬টি শিক্ষা চ্যানেলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার সংক্রান্ত ভার্চুয়াল/জুম সভা’ গত আগস্টে অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্বাক্ষরিত ওই সভার কার্যবিবরণী সম্প্রতি প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। কার্যবিররণীতে স্কুল-কলেজে সরাসরি শ্রেণী কার্যক্রম কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাঠদান কার্যক্রমকে আরও ব্যাপক ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড একটি ‘হাইব্রিড’ শিক্ষা পদ্ধতির প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কার্যবিবরণী প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ্য থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের একজন পরিচালক বলেন, ‘করোনা মহামারীর অভিজ্ঞতায় একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে, সেটি হলো- ব্লেন্ডেড লার্নিং (মিশ্রণ শিক্ষা) অর্থাৎ, অফ লাইন শিক্ষার (শ্রেণীকক্ষে পাঠদান) পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষাও অব্যাহত থাকবে। তবে কোন মাত্রায়, কোন পদ্ধতিতে অনলাইন শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়া যাবে সেটিই বিষয়।’

সবার জন্য সমান শিক্ষা নিশ্চিত করাকেই অনলাইন শিক্ষার ‘মূল চ্যালেঞ্জ’-উল্লেখ করে মাউশি পরিচালক বলেন, ‘এর জন্য ডিজিটাল ডিভাইসের যোগান দেয়া, ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করা এবং এর ব্যয়ের বিষয়টি কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে নির্বাহ করা যায় সেটির ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’ 

হাইব্রিড শিক্ষা পদ্ধতিতে পাঠদান

‘হাইব্রিড’ শিক্ষা পদ্ধতির আওতায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত একটি করে মোট ৯টি এবং ৯ম থেকে ১২তম ক্লাস পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্যিক বিভাগের জন্য পৃথক বন্দোবস্ত রেখে মোট ১২টি হিসেবে, সর্বমোট ২১টি (প্রতি ৩টি ক্লাসের জন্য একটি করে প্রাথমিকভাবে সাতটি) পৃথক শিক্ষা চ্যানেল সম্প্রচার করা হবে। যাতে একই পরিবারের একাধিক ক্লাসের ছাত্রছাত্রী নির্বিঘেœ পাঠ গ্রহণ করতে পারবে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও আরও ৫টি (প্রাথমিকভাবে ২টি) পৃথক চ্যানেল পরিচালনা করা হবে। ভবিষ্যতে ডিগ্রি ও বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়েও এ পদ্ধতি চালুর করা সম্ভব বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

‘হাইব্রিড’ শিক্ষা পদ্ধতিতে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১১টা, ১১টা থেকে বিকেল ৩টা ও বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৪টি পৃথক ‘লাইভ সেশন’ চলতে থাকবে। ছাত্রছাত্রীরা ভাইবোনদের সঙ্গে সমন্বয় করে যে কোন একটি সেশনে ভর্তি হতে পারবে। রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ‘রিপিট সেশন’ চলবে। বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরাও তখন পাঠ নেয়ার সুবিধা পাবে। প্রতিটি লেকচার ‘ইউটিউবে’ সংরক্ষিত থাকবে যা ছাত্রছাত্রীরা যে কোন সময় দেখতে পারবে।

প্রতিটি সেশনে ৪ ঘণ্টায় ৪টি পৃথক বিষয়ের ওপর পাঠদান করা হবে। ৫০ মিনিটের ক্লাস ও ১০ মিনিটের বিশ্রামের বন্দোবস্ত থাকবে। ৫০ মিনিটের মধ্যে ৩০ মিনিটের পাঠদান শেষে চলবে ২০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্ব। পাঠদানের জন্য প্রতিটি বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ দেশসেরা শিক্ষকদের কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে ‘হাইব্রিড’ শিক্ষা পদ্ধতিতে।

‘লাইভ সেশনসমূহ’ স্যাটেলাইট চ্যানেলের পাশাপাশি ইন্টারনেটেও ‘লাইভ স্ট্রিম’ করা হবে। ‘লাইভ সেশন’ চলার সময় ছাত্রছাত্রীরা ‘টেক্সট ম্যাসেজ’ ও ‘ইন্টারনেটের’ মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারবে। প্রয়োজনে ভিডিও কলেরও সুবিধা রাখা হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে ‘শিখন কার্যক্রম’ শুরু হলে শ্রেণীভিত্তিক পাঠদান এমনিতেই কমে আসবে। এখানে সপ্তাহে দুদিন ছুটি রাখা হয়েছে, এই ছুটির দিনেও শিক্ষার্থীরা বাসায় কারিকুলামের কিছু কাজ করবে। স্কুলের পাশাপাশি অনলাইনেও শিক্ষা ও মূল্যায়ন কার্যক্রম চলবে। আবার বিভিন্ন কমিউনিটির মাধ্যমেও হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন শিক্ষাক্রমের ডিজাইন এমনভাবে করেছি যে, শিক্ষার্থীরা স্কুলের পাশাপাশি বাইর থেকে শিখতে পারবে, অন্য কোন মাধ্যমেও শিখতে পারবে। শ্রেণীকক্ষ থেকেই যে সবকিছু শিখবে, সেটি আর থাকছে না।’ এতে শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশনের পরিধি বাড়বে বলেও জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।

২৬টি শিক্ষা চ্যানেলের প্রস্তাব

২৬টি (প্রাথমিকভাবে ৯টি) লাইভ সেশনের জন্য ঢাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক এবং পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় ও জেলা শহরেও লেকচার স্টুডিও স্থাপন করা হবে। এনসিটিবি প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১২তম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাস ও বিভাগের জন্য পৃথক পৃথকভাবে মোট ২৬টি শিক্ষা চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়াও কারিকুলাম অনুযায়ী এনসিটিবি বিষয় শ্রেণী ও বিষয় ভিত্তিক ক্লাসসমূহ বিভাজন, ক্লাস ‘ডিউরেশন’ (সময়) নির্ধারণ এবং যে সব শিক্ষক ক্লাস নিবেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওই শিক্ষকদের পুল গঠন করে দেবেন।

ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ‘শিক্ষা টিভি’ চ্যানেল স্থাপন কিংবা এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১২তম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাস ও বিভাগের জন্য পৃথকভাবে মোট ২৬টি শিক্ষা চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারের বিষয়ে অনাপত্তি প্রদান করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি প্রয়োজন। তাছাড়া, বিটিভি, বিটিভি চট্টগ্রাম, সংসদ টিভি এবং বিদ্যমান বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে কিভাবে পাঠদান কার্যক্রম সম্প্রচার করা যায় সে বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সারসংক্ষেপ প্রেরণ করা যেতে পারে।’

‘প্রাইভেট টিউশন’ কমার আশা

করোনা মহামারী কেটে গেলেও ‘শিক্ষা চ্যানেলের’ প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে না- উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চ্যানেলগুলো চালু থাকলে প্রাইভেট টিউশনের দৌরাত্ম দূর হবে। স্কুলের বাইরেও এ চ্যানেলগুলো থেকে বাড়তি পাঠ নেয়া যাবে।

খরচ সাশ্রয়ের আশা

দীর্ঘমেয়াদেও একই স্কুল-কলেজের অবকাঠামো ব্যবহার করে সপ্তাহে ২ দিন ‘ফিজিক্যাল’ ও ৪ দিন অনলাইন পদ্ধতিতে একই ক্লাসের ৩টি পৃথক ব্যাচকে পাঠদান করা যেতে পারে; এতে অবকাঠামো নির্মাণের বিপুল খরচও সাশ্রয় হবে। সপ্তাহে ১দিন বরাদ্দ থাকবে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি কর্মকান্ডের জন্য।

অদূর ভবিষ্যতে জেলা/উপজেলায় ‘কম্পিউটার ল্যাব’ স্থাপন করে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মত ব্যাচ করে প্রয়োজনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনলাইন পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079638957977295