কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার হাতে কামড়ের দাগ দেখা গেছে। মরদেহে যখমের চিহ্ন স্পষ্ট। হাতে দাঁতের চিহ্ন ছাড়াও রক্তজমাট থাকার কথা বলেছে পুলিশ। দৈনিক শিক্ষার হাতে থাকা ছবিতেও এসব চিহ্ন স্পষ্ট। এদিকে সোমবার রাতেই পালিয়েছে আসামী আনভীর সোবহান। একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন : দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
রাজধানীর গুলশানে অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে হত্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আসামীকে গ্রেফাতারের দাবি করেছেন তার স্বজনেরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে নিজ ফ্ল্যাট থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তরুণীর পরিবার। এদিকে কলেজ ছাত্রী মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার ভগ্নিপতি ও বোন।
কী ঝামেলায় পড়েছিল কলেজ ছাত্রী মোসারাত, নানা রহস্য
ছাত্রীর লাশ, বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে তার ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান বলেন, আমার শ্যালিকা (মুনিয়া) আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। দুদিন আগেও তার সঙ্গে কথা বলেছি। আত্মহত্যা করবে এমন কোনো মোটিভেশন ছিল না। আমাদের মনে হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আমরা ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষা করবো।
যা আছে সেই কলেজ ছাত্রীর ডায়েরিতে
কী ঝামেলায় পড়েছিল কলেজ ছাত্রী মোসারাত, নানা রহস্য
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে আজ (২৭ এপ্রিল) মুনিয়ার নিথর দেহ তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাদ আসর জানাযার নামাজ শেষে নগরীর টমছমব্রিজ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
‘কলেজ ছাত্রী মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে’
বিকেল সাড়ে ৪ টায় নগরীর উত্তর বাগিচাগাঁও এলাকার অরণি হাউজের সামনে আসে মুনিয়ার মরদেহ বহন করা গাড়ি। সেখানে অপেক্ষমান স্বজনরা লাশের গাড়িতে এক পলক দেখেন মুনিয়াকে, জানান শেষ বিদায়।
লাখ টাকার ভাড়া ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন সেই ছাত্রী
কুমিল্লায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় মুনিয়া
পরে সেখানে কান্নারত কন্ঠে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান উপস্থিত সংবাদিকদের বলেন, আমার বোনকে মানসিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি মামলা করেছি। আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার দাবি জানাই। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
‘আসামি সায়েমকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই’
ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন কুমিল্লার মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়া। রাজধানীর গুলশানের ১২০ নম্বর রোডের এই বাড়িতে গেল মাসের ১ তারিখে ভাড়া আসেন তিনি। বাসাটির ভাড়া ছিল ১ লাখ টাকা। বাসায় একাই থাকতেন কলেজছাত্রী মুনিয়া। খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় বাসার তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত লাশটি উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ।
এ ঘটনার পর সোমবার গভীর রাতে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান।
নিহতের বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ জানান, দীর্ঘদিন নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলেও মুনিয়া আত্মহত্যা করতে পারে এটা মনে হয় না। ঘটনাটি রহস্যজনক বলেই মনে হয়।
মুনিয়ার জানাজা শেষে স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, মুনিয়ার বাবা প্রয়াত মো. শফিকুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা। দীর্ঘদিন ভাই আশিকুর রহমান সবুজের সাথে মুনিয়া ও তানিয়ার পারিবারিক বিরোধ চলছিল, যে কারণে কুমিল্লায় নিজ বাসায় তাদের যাতায়াত কম ছিল।
এর আগে সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ভাড়া বাসা থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। গতমাসে ওই বাসা ভাড়া নেন তিনি। তার ওই বাসায় এক শিল্পপতি প্রায়ই যাতায়াত করতেন। পরে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গভীর রাতে শিল্পপতিকে আসামি করে মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন।