দীর্ঘ ১১ বছর ধরে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তিনজন শিক্ষক। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে নওগাঁর মান্দায় কালিকাপুর চককালিকাপুর স্কুল এণ্ড কলেজে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন তারা। গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এমপিও ভোগ করছেন জালিয়াত শিক্ষকরা। জাল সনদ দিয়ে সরকারি লাখ লাখ টাকা এমপিও বাবাদ আত্মসাৎ করছেন।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এ তিন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল বলে যাচাই প্রতিবেদন দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। একই সাথে জাল সনদধারী এ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে অধ্যক্ষকে।
জাল সনদধারী শিক্ষকরা হলেন, কালিকাপুর চককালিকাপুর স্কুল এণ্ড কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক জাহানারা, কম্পিউটার শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মো. এনামুল হক।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, জাল সনদধারী এ শিক্ষকরা ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তারা নিয়মিত এমপিও ভোগ করতেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তিনজন শিক্ষকের সনদ যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়েছিল। গত ২৯ ডিসেম্বর তাদের সনদ যাচাই করে প্রতিবেদন দিয়েছে এনটিআরসিএ। যাচাইয়ে তিন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এনটিআরসিএ সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ম শিক্ষক জাহানারা যে সনদটি দাখিল করে চাকরি নিয়েছেন তার প্রকৃত মালিক, হাবিব মো. আব্দুল আওয়াল নামের আরেক প্রার্থী। ৪র্থ নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ জাল করে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাস থেকে এ জালিয়াত জাহানারা এমপিওভোগ করছেন বলে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় সতেরো লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ ৩য় নিবন্ধন পরীক্ষার যে সনদটি দিয়ে চাকরি নিয়েছেন তার প্রকৃত মালিক গোলক চন্দ্র রায়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পেয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ষোল লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছেন জালিয়াত আবুল কালাম।
জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক এনামুল হক যে নিবন্ধন সনদটি জমা দিয়ে নিয়েছেন তা আসলে অনুত্তীর্ণ। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পেয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ষোল লাখ টাকা সরকারের কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
এনটিআরসিএর সনদ যাচাই প্রতিবেদনে জাল ও ভুয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করতে কালিকাপুর চককালিকাপুর স্কুল এণ্ড কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোহাম্মদ আব্দুল আলিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি এখনো বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের চিঠি হাতে পাইনি। অফিসিয়ালভাবে চিঠি হাতে পেলেই সরকারি নির্দেশনা অনুসারে মান্দা থানায় এ জাল নিবন্ধন সনদধারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
জাল সনদধারী শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার নিবন্ধন সনদ সঠিক। তবে, কেন সনদটি জাল বলা হচ্ছে তা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
অপর জাল নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক এনামুল দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমার সনদ ঠিক আছে এবং ওয়েবসাইটে আছে। আমার ৩/৪ টি সার্টিফিকেট। আমি সব বিষয়ে নিবন্ধন করেছি। তবে, কেন সনদটি জাল বলা হচ্ছে তা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এ শিক্ষকও।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব (লিংক যাবে) করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।