১০০ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল : ব্যয় বাড়ছে তিন গুণ সময় আট বছর - দৈনিকশিক্ষা

১০০ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল : ব্যয় বাড়ছে তিন গুণ সময় আট বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দুই দফা সময় ও ব্যয় বাড়ালেও ১০০ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। ৯২৪ কোটি টাকার প্রকল্প এখন দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রকল্পের আরেকটি সংশোধনী প্রস্তাব উঠছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৯২৪ কোটি টাকা।

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দুই হাজার ২৮১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা করা হয়। এরপর আনা হয় একটি বিশেষ সংশোধনী এবং ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৬৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। বিশেষ সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ধরা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এই মেয়াদেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

সর্বশেষ আরো ১৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাড়িয়ে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এতে মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ৫২০ কোটি ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটিসহ আজ একনেকে ১১টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উঠছে। এর আটটি নতুন, তিনটি সংশোধিত প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৪ হাজার ৮৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বলেন, প্রকল্পটি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ জনবল তৈরি করে দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তবে বর্তমানে অনাবাসিক ভবন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং ভূমি অধিগ্রহণে দেরির কারণে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বাকি কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা  জানান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো যুক্ত করে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (ডিপিপিতে) নতুন সংশোধনীর বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, বিভিন্ন জটিলতায় ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণকাজে কোনো অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৯০ শতাংশ ভূমির অধিগ্রহণ অর্থাৎ ৯৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের (টিএসসি) ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে সীমানা নির্ধারণে স্থানীয় প্রতিবন্ধকতা, নির্বাচিত নিচু জমির উন্নয়ন, মাটি পরীক্ষায় দেরি ইত্যাদি কারণে নির্মাণকাজ শুরু করতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। তা ছাড়া কভিড-১৯ মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রকল্পটির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। 

এই অবস্থায় দুই হাজার ৫২০ কোটি ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অর্থ আগের মূল অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ১৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৭০ শতাংশ বলে প্রস্তাবে তথ্য দেওয়া হয়।

নতুন মেয়াদেও প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আক্তারউজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু আমরা একটা হিসাব-কিতাব করে প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছি; সেহেতু আশা করছি, প্রকল্পটি নতুন মেয়াদে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। ’  

জ্বালানি তেল পরিশোধন, মজুদ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে দুই হাজার ১৮৮ কোটি টাকা

সরকারি একমাত্র প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধন, মজুদ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। গত সাত বছরেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে দুই দফায় সংশোধনের কারণে বেড়ে গেছে এর ব্যয়। তৃতীয় দফা প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় বাড়াতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

এখন প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে সাত হাজার ১২৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অর্থ প্রথম অনুমোদন হওয়া মূল প্রকল্প ব্যয়ের চেয়ে দুই হাজার ১৮৮ কোটি টাকা বেশি। ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন নামের প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করা এবং পরিশোধিত তেল মজুদ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে একনেকে অনুমোদিত হওয়ার সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০১৮ সালে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৯ সালে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ব্যয় ধরা হয় ছয় হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করা হয়নি। এবার তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাবে সময় চাওয়া হয়েছে আরো এক বছর। প্রস্তাবনা অনুসারে কাজ চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।

মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রকল্পের জার্মানিভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে সম্পাদিত মূল চুক্তির কর্মপরিধির বাইরে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মাতারবাড়ী অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশের কাজের নকশা পর্যালোচনা করতে হবে। চুক্তির অতিরিক্ত কাজ সংযোজন করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।

প্রকল্পের আওতায় কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মাতারবাড়ীতে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন নির্মাণ করার কথা। মহেশখালীতে ৬০ হাজার ঘনমিটার ক্ষমতার তিনটি অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণাগার এবং ৩৬ হাজার ঘনমিটার সম্পন্ন তিনটি ডিজেল স্টোরেজ ফার্ম নির্মাণও এর অন্যতম কাজ।

প্রকল্পের জন্য চার হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। সরকার দিয়েছে ৬০১ কোটি টাকা। বাকি এক হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)।

উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন  বলেন, সঠিক সময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন না হলে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হয়, অন্যদিকে ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এই প্রকল্পগুলো থেকে রিটার্ন আসতেও দেরি হয়। তিনি বলেন, ‘সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে পেরে শ্রীলঙ্কার কিন্তু দেউলিয়া দশা হয়েছে। আমাদের সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। ’

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039727687835693