২০১৪ সালে ১২তম শিশু সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেখ লোমাত সহিবা চোখের আলো হারাতে বসেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, অস্ত্রোপচার করলে আবার তিনি চোখের আলো ভালোভাবে ফিরে পেতে পারেন। এ জন্য খরচ লাগবে দুই লাখ টাকার মতো। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।
শেখ লোমাত সহিবা যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করেন। পরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। উপশহর ডিগ্রি কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে যশোর সরকারি এমএম কলেজে রসায়ন বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন।
২০১৪ সালে সেভ দ্য চিলড্রেনের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পরিচালিত ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) নামে একটি শিশু অধিকার-বিষয়ক সংগঠনের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন লোমাত সহিবা। দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচিত চাইল্ড পার্লামেন্ট মেম্বারদের (শিশু সংসদ সদস্য) অংশগ্রহণে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ১২তম চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন হয়। ওই অধিবেশনে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন যশোরের মেয়ে সহিবা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।
লোমাত সহিবা বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে বাম চোখে হঠাৎ অন্ধকার দেখেন। শহরের কপোতাক্ষ লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকেরা বলেন, তাঁর বাম চোখের রেটিনা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিশা চক্ষু হসপিটালে তাঁর চোখের অস্ত্রোপচার হয়। পরে ঢাকায় আরেকটি অস্ত্রোপচার করলে সেটি সফল হয়নি। এদিকে তাঁর চোখে ছানি পড়ে। এখন এই চোখে কিছুই দেখতে পান না। ডান চোখের ওপর বেশি চাপ পড়ায় সেটাও অকেজো হতে চলেছে। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন, দ্রুত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের ছানি অপসারণ করে লেন্স স্থাপন করার।
সহিবার মা মেরী হুদা বলেন, যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন। তবে মেয়ের চিকিৎসার জন্য দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাগবে।
সহিবার বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা ও জেলা শিশু একাডেমির প্রধান সাধন দাস বলেন, সহিবা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। বাল্যবিবাহসহ শিশুদের সামাজিক কোনো সমস্যার খবর পেলে তিনি ছুটে যেতেন। তাঁর অসুস্থতার খবর শুনে খারাপ লাগছে। তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে সহায়তার জন্য শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তিনি চিঠি লিখবেন বলে জানালেন।
লোমাত সহিবার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। একমাত্র ভাইটি করোনায় চাকরি হারিয়ে এখন বেকার। সব মিলিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো অবস্থায় তাঁর পরিবারের নেই।