৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আত্তীকরণ না হলে আমরণ অনশনে যাবেন সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আত্তীকরণ না হলে আমরণ অনশনে যাবেন সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারিকরণের তারিখ থেকে কর্মরত সব শিক্ষক কর্মচারীকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এডহক নিয়োগসহ ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস)। বুধবার (২৬ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় তারা। দাবি না মানলে আমরণ অনশন শুরু করার হুমকি দিয়েছেন তারা। 

দাবি না মানলে আগামী ২৬ থেকে ৩১ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর দাবি পূরণের আবেদনপত্র জমা দান ও মতবিনিময়, ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী গণসংযোগ করবেন বলে জানায় সকশিস। এর সময়ের মধ্যেও যদি দাবি পূরণ না করা হয় তাহলে আগামী ৪ অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টায় ৬৪ জেলা সদর অফিসের সামনে মানববন্ধন ও ১১ অক্টোবর একই সময়ে ঢাকায় মানববন্ধন করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান সকশিস’র নেতারা। সবশেষে তারা আমরণ অনশন শুরু করবেন। 

শিক্ষক নেতারা বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারক উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নজির বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও আছে বলে জানা নেই। তবে আত্তীকরণের কাজে মাউশি অধিদপ্তরে যারা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অযাচিত মন্তব্য লিখে প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন তাদেরকেই আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে, যা নজিরবিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমুলক বলে প্রতীয়মান হয়। এ জাতীয় বিশৃঙ্খলা রোধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং আত্তীকরণের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই কাজের সাথে অধিদপ্তরের সম্পৃক্তদেরকে মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কাজে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত করা যাবে না বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা।

আত্তীকরণের কাজ দ্রুত শেষ করতে চলতি বছরের ১ জুন থেকে ৫টি উপকমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত ২টি উপকমিটি কাজ করছে এবং ৩টি উপকমিটির কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয় বলে দাবি তাদের। তারা বলেন, ১ জুন থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাত্র ৯টি কলেজের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে সক্ষম হয়েছে। এ দীর্ঘসূত্রিতার দ্রুত অবসান দাবি করেন তারা।

শিক্ষক নেতারা বলেন, যারা অধিদপ্তরে মাসের পর মাস সময় নিয়ে অযাচিত মন্তব্য লিখে পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন, তাদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করে চতুর্থ ধাপে আবার মন্ত্রণালয়ে কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই করানোয় সংশ্লিষ্টদের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। এসময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মূল পত্রিকা নেই; ডিজি প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মনোনয়নের পত্রাদেশের মূল কপি নেই এবং ফটোকপিও নেই, মূল কপি নেই, ফটোকপি আছে; নিয়োগের মূল্যায়ন শিটের মূল কপি নেই, কিন্তু প্রার্থীর তালিকায় নির্বাচিত লেখা আছে, মূল্যায়ন শিটে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নেই, নিয়োগের মূল্যায়ন শিটে ডিজি প্রতিনিধির স্বাক্ষর ও সিল অস্পষ্ট, নিয়োগের মূল্যায়ন শিটে ডিজি প্রতিনিধির স্বাক্ষর থাকলেও সিল নেই, নিয়োগ মূল্যায়ন সিটে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর সন্দেহজনক, প্রতিনিধির স্বাক্ষর ভিন্ন কালিতে; মূল্যায়ন শিট নেই, রেজুলেশন করে নির্বাচিত লেখা হয়েছে; নিয়োগ পরীক্ষা প্রতিযোগিতামূলক হয়নি ইত্যাদি অধিদপ্তরের অযাচিত মন্তব্য ও বিষয়গুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটি বলে উল্লেক করেন। এসব অযাচিত মন্তব্য লিখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম বাদ রেখে পদ সৃজনের প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয় বলে দাবি শিক্ষকদের।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা জানান, এ কলেজগুলো যখন বেসরকারি ছিল তখন এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও প্রদানের সময় নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করেই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিও প্রদান করেছেন। এমপিওভুক্তির সময় তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজগুলোও করেছে অধিদপ্তরে কর্মরত বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের সময় নিয়োগ বোর্ডে অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসাবে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। আবার বিভিন্ন সময় এসব কলেজগুলোতে পরিদর্শন ও নীরিক্ষার কাজগুলোও করেছেন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সে সময় তাদের কর্মকাণ্ডে যেসব শিক্ষক-কর্মচারী বৈধ ছিল, আত্তীকরণের কাজের সময় তাদের অধিকাংশয়ই অজ্ঞাত কারণে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরিচলনার জন্য ১৯৮০, ১৯৯৫ ও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারি করা হলেও সুস্পট নিয়োগ কাঠামো নেই। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের পূর্বে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রেও নিয়োগ বোর্ডের ডিজি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মনোনয়নের পত্রাদেশের কপি বাধ্যতামূলক ছিল না। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য ডিজির প্রতিনিধি নির্ধারিত কলেজ থেকে নিতে হবে এমন কোনো সুস্পষ্ট বিধি-বিধান ছিল না। এমনকি, মূল্যায়ন পরীক্ষা কত নম্বরের হবে, মৌখিক না লিখিত পরীক্ষা হবে, নাকি উভয়ই পরীক্ষা হবে তার কোনো সুপষ্ট বিধি-বিধানও ছিল না। অথচ এ সকল কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের পদ সৃজনের প্রস্তাব না করে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। যার সবই প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত। 

তারা আরও বলেন, প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে- চাকরি প্রার্থীরা তা দেখে আবেদন করেছেন। প্রতিষ্ঠান সিলেকশন দিয়ে চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দিয়েছেন। চাকরিপ্রার্থী যোগদানপত্র পেশ করেছেন। প্রতিষ্ঠান বিধি বিধান অনুযায়ী যোগদানপত্র গ্রহণ করে প্রার্থীর এমপিওভুক্তির আবেদন অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন এবং অধিদপ্তর কাগজপত্র ও প্রাপ্ততা যাচাই-বাছাই করে এমপিও দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীর কাছে নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র এবং তার অর্জিত সনদ ব্যতীত অন্য কিছু সংরক্ষণ করার কথা নয় এবং তার বেশি সংরক্ষণ করার এখতিয়ারও তাঁর নেই। যেসকল কাগজপত্র প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষণ করার কথা কোনো কারণে প্রতিষ্ঠান সেসকল কাগজপত্র সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়ে থাকলে তার জন্য প্রতিষ্ঠান দায়ী হতে পারে, ব্যক্তি নয়। কিন্তু এ কারণে ব্যক্তিকে দায়ী করে- তাঁর পদ সৃজন না করে প্রস্তাব পাঠানো অযৌক্তিক ও অমানবিক।

উল্লেখ্য, কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীর আত্তীকরণে প্রতিষ্ঠানিক ত্রুটিজনিত কারণে শিক্ষক-কর্মচারীকে আত্তীকরণ বঞ্চিত করা হচ্ছে, অথচ স্কুল শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকরণে প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটির কারণে কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে আত্তীকরণ বঞ্চিত করা হয়নি। তাই প্রাতিষ্ঠানিক ক্রটির কারণে কোন শিক্ষক-কর্মচারীকে আত্তীকরণ বঞ্চিত করা যাবে না বলে দাবি তাদের।

শিক্ষক নেতাদের দাবি, ২৯৯টি কলেজের সকল মূল কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াগত কারণে সময়ক্ষেপণ ও টালবাহানা এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার জন্য ছাত্রছাত্রী, সাধারণ জনগণ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীসহ সবাই সরকারিকরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সরকারিকরণের সুযোগ সুবিধা না পেয়েই অবসরে চলে গেছেন। ইতোপূর্বে সরকারি হওয়া কলেজসমূহের কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর উত্তর বয়স অতিক্রম করলেও প্রক্রিয়াধীন কাজের মধ্যে কর্মরত থাকায় ভূতাপেক্ষভাবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমান ২৯৯টি কলেজের ক্ষেত্রে বর্তমান কর্মরতদের মধ্যে যাদের বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের নাম কর্তন করে পদ সৃজনের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে, যা অযৌক্তিক, অমানবিক, বৈষম্যমূলক, নিয়ম বর্হিভূত ও মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা’২০১৮ জারি করা হয়। জারিকৃত বিধিমালায় আত্তীকরণের ৪৬ বছরের ইতিহাসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আত্তীকৃতদের মর্যাদা, পদোন্নতি, বেতনভাতাদি নির্ধারণ ও কার্যকর চাকরিকাল গণনানহ নানান বিষয়ে বৈষম্য ও অসঙ্গতির সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা’২০১৮ এর ৯- এ উল্লেখ আছে, বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ : ‘অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীগণ, সংশ্লিষ্ট কলেজ সরকারিকরণের তারিখ হইতে, বিদ্যমান জাতীয় বেতন স্কেলে সংশ্লিষ্ট গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে স্ব-স্ব পদের বেতন-ভাতাদি প্রাপ্য হইবেন’। এতে করে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-কর্মচারীই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং বেতন-ভাতাদি কমে যাবে। তাছাড়া বেসরকারি আমলে অভিজ্ঞতা থাকার পরও অনুপাত প্রথাজনিত কারণে অনেকেই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাননি এবং অনেকেই গ্রেড উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। বর্তমান সময়ে সরকার বেসরকারি কলেজে চাকরি ১০ বছর পূর্ণ হওয়ায় গ্রেড উন্নয়ন চালুর পাশাপাশি অনুপাত প্রথা বাতিল করে ৫০ভাগ প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই সরকারিকৃত কলেজসমূহে পদ সৃজনে বেসরকারি আমলের পূর্ণ অভিজ্ঞতা গণনা করে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও গ্রেড উন্নয়ন প্রদান করে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করার জোর দাবি জানান তারা।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076570510864258