২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ২১তম অধিবেশনের মধ্য দিয়ে ভাঙে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ১৪ বছরের অচলায়তন। পরের বছর ২২তম অধিবেশনও অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর সিনেটের একটি সভাও বসেনি। বিষয়টিকে আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা যায়, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ও ২৯ জুন ২০তম সিনেট অধিবেশনের পর সিনেটের কার্যক্রম থেমে থাকে ১৪ বছর। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মে ২১তম সিনেট অধিবেশনের মাধ্যমে এ অচলায়তন ভাঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মিজানউদ্দীন। পরবর্তী বছর তার সভাপতিত্বে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে সর্বশেষ সিনেটের ২২তম অধিবেশন বসার পর আর সিনেটের সভা হয়নি।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের ২১ নং ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য বছরে অন্তত একবার সিনেটের সভা ডাকবেন, যা বার্ষিক সভা হিসেবে অভিহিত হবে।
বছরে একবারও সিনেটের অধিবেশন না হওয়াকে আইনের ব্যত্যয় বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বছরে একবার সিনেটের অধিবেশন বাধ্যতামূলক এবং বাজেটটা পাস করতে হবে সিনেটে।
সিনেট অধিবেশন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের ২২ নং ধারায় বর্ণিত—বাজেট অনুমোদন, বার্ষিক প্রতিবেদন পাস, আইন সংশোধন ও অনুমোদনসহ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনোটিই হয়নি সিনেটের মাধ্যমে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ফোরামের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণের সর্বোচ্চ ফোরাম সিনেট বলে আইনেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব কার্যক্রম চলছে উপাচার্য ও সিন্ডিকেটের বিশেষ ক্ষমতাবলে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, সিনেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বডি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এটাকে কোনোভাবে অবহেলা করছে এবং এড়িয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের ১১(১) নং ধারা অনুযায়ী সিনেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ সিনেট সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যবিশিষ্ট উপাচার্য প্যানেল গঠন করা। দুই দশক ধরে উপেক্ষিত প্যানেল নির্বাচনের কাজ। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগের কাজটি সচল করছে না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসঊদ।
সিনেটের সভা না হওয়া এবং সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য প্যানেল তৈরি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, নানা রাজনৈতিক কারণে সিনেটকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।