৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসের বাইরে ছিল - দৈনিকশিক্ষা

৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসের বাইরে ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাকালে দেশের গ্রাম অঞ্চলের ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছিল অনলাইন ক্লাসের বাইরে। আর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত পাঠ কার্যক্রমের আওতার বাইরে ছিল গ্রামের ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এক জরিপে উঠে এসেছে।  করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পড়াশোনার ঘাটতি পূরণে এ সময়ে টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালু করে সরকার। এতে শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ দূরশিক্ষণ ও অনলাইন পাঠদানের সুবিধা পেলেও ব্যতিক্রম চিত্র ছিল গ্রামাঞ্চলে। 

শিক্ষা ব্যবস্থায় করোনার প্রভাব বিষয়ে জানতে চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর একটি জরিপ চালায় ব্যানবেইস। এতে ১৯টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ২৪০টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৫১৬ জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অংশ নেন। উপজেলাগুলোর মধ্যে নয়টি গ্রাম, তিনটি শহর, দুটি পাহাড়, দুটি চর ও একটি চা বাগান অঞ্চলের। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক জরিপ চালানো হয় গ্রামাঞ্চলের ১৪৪টি, উপজেলা পর্যায়ের ৫০টি ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের ১ হাজার ৯৫৮ জন, উপজেলা পর্যায়ের ৬৪৮ ও সিটি করপোরেশনের ৬৫২ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চালানো হয় ব্যক্তি পর্যায়ের জরিপ। এসব জরিপে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে ব্যানবেইস। তবে প্রতিবেদনটি এখনো প্রকাশিত হয়নি।

ব্যানবেইসের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জরিপের আওতাধীন ২৪০টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩৬টিতে অনলাইন পাঠদান চালু ছিল। অর্থাৎ অনলাইনে পাঠদান চালু ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে। আর অনলাইন ক্লাসগুলোয় শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের গড় হারও ছিল ১৫ শতাংশ। বাকি ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছিল অনলাইনভিত্তিক পাঠ কার্যক্রমের বাইরে। এর মধ্যে অনলাইন পাঠদানে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে ছিল গ্রামের শিক্ষার্থীরা। জরিপের তথ্য বলছে, গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, উপজেলা পর্যায়ের ১২ ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছে।

একইভাবে সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত পাঠদান সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে ছিল গ্রামের শিক্ষার্থীরা। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সংসদ টিভিতে সম্প্রচার হওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে গ্রামাঞ্চলের মাত্র ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ জরিপে অংশ নেয়া ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই টেলিভিশনে ক্লাস দেখেনি। উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিভির পাঠদানের আওতায় ছিল ৩৬ শতাংশ। আর সিটি করপোরেশন এলাকার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের ক্লাস দেখেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ডিভাইসের অপ্রতুলতা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ না থাকা ও সচেতনতার অভাবেই গ্রামের শিক্ষার্থীরা অনলাইন পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে গ্রাম ও শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিখনের ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। 

এদিকে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পাঠ অভ্যাসেও অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। ব্যানবেইসের জরিপে দেখা গেছে, করোনার আগে দিনে গড়ে ৩-৭ ঘণ্টা পড়ত এমন শিক্ষার্থীর হার ছিল ৬০ শতাংশ। যেখানে গড়ে ৩-৭ ঘণ্টা পড়া শিক্ষার্থীর হার করোনাকালে এসে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে করোনার আগে বিদ্যালয়ের পাঠদানের বাইরে কোনো পড়ালেখাই করত না এমন শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। যদিও করোনাকালে এ ধরনের শিক্ষার্থী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। জরিপে দেখা গেছে, করোনকালে কোনো পড়ালেখাই করেনি এ ধরনের শিক্ষার্থীর হার গ্রামে ৩৮ শতাংশ, উপজেলা পর্যায়ে ২৪ ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ২২ শতাংশ।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন  বলেন, ব্যানবেইসের প্রতিবেদনটি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। তবে যে তথ্য-উপাত্তের কথা বলা হলো, তার সঙ্গে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্যের কোনো মিল নেই। করোনাকালে গ্রামাঞ্চলে যেখানে টেলিভিশন বা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পৌঁছানো যায়নি, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়েছেন শিক্ষকরা। আমরা অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া সচল রেখেছি।

ব্যানবেইসের জরিপ ও মাউশির মাঠ পর্যায়ের তথ্যের গড়মিল বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ জরিপের তথ্য ও প্রশাসনিক তথ্যের সঙ্গে অনেক অমিল থাকে। অনেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজেদের পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে বলেন। কিন্তু জরিপে সরাসরি শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া যাচাই-বাছাইয়েরও একটি বিষয় রয়েছে। ধরুন প্রথমে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যখন অনলাইন ক্লাস বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলো, তাদের অনেকেই অনলাইন ক্লাস নেয়ার কথা জানায়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হারের তথ্য চাওয়া হলে তাদের অনেকেই সেটি দেখাতে পারেনি। এজন্য শুধু যারা অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের তথ্য দিতে পেরেছে, তাদের বিষয়টি আমলে নেয়া হয়েছে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064828395843506