রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেনকে ‘অযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকরা। সেনা বাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে অধক্ষ পদে বসানোর দাবি করেছেন তারা। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তি বাদ দিয়ে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে সভাপতি করে বিশেষ গভনিং বডি গঠনের দাবিও জানানো হয়েছে।
এসব দাবিতে মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন ও গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুর রহমান টিটু, কুষ্টিয়ার শিবির নেতা খণ্ডকালীন শিক্ষক এইচএম সায়েদুজ্জামান ও বরখাস্ত শাখা প্রধান নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তৈরি হয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। কমেছে শিক্ষার মান। এমনকি যেই প্রতিষ্ঠানটি ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পাচ্ছেনা বলেও জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, কেনাকাটায় অনিয়ম, শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত করে পুনর্বহাল, ফেল করা শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়ম চলছে। এসব ব্যাপারে কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
মঙ্গলবার সকালে প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষক-কর্মচারীরা নানা ব্যানার নিয়ে অংশ নেন। এগুলোতে লেখা ছিল,‘অবৈধ, দুর্নীতি পরায়ণ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ ও ডেপুটেসনে আর্মি প্রিন্সিপাল চাই’, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত বিশেষ কমিটি চাই’ ইত্যাদি। মানববন্ধনে শিক্ষকরা কয়েকদফা দাবি জানান।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, অধ্যক্ষ পদ থেকে সেনা কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর সাময়িক সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মো: আবুল হোসেনকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছরেও স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়নি। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অদক্ষতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আবুলের সঙ্গে যৌথভাবে ভুয়া অনলাইন বানিয়ে চাঁদাবাজি করে সায়েদুজ্জামান। শিবির হওয়া সত্ত্বেও সায়েদুজ্জামানকে সহায়তা করেন আবুল।
শিক্ষক-কর্মচারীরা আরও অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অদক্ষতায় তারা ঠিকমতো বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্য কল্যাণ ভাতা এবং গ্রাচুইটি দেওয়া হচ্ছে না। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের কোনো পুনর্মিলনী করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের টাকার সঠিক হিসাব দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষক-কর্মচারীদের কো অপারেটিভ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারীদের নির্যাতনে টর্চার সেল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
শিক্ষক কর্মচারীদের দাবিগুলো হলে, শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্যাতনের জন্য টর্চার সেল বন্ধ করতে হবে, নাসির উদ্দিন বাদে অন্যান্য বরখাস্তকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বপদে বহাল করতে হবে, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারিদের প্রাপ্য ভাতা দিতে হবে, দীর্ঘদিন কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের স্থায়ী করতে হবে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বৈশাখী ভাতা শিক্ষক-কর্মচারীদের দিতে হবে, বকেয়াসহ ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।
শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে আরও আছে, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘণ করা সব পদায়ন বাতিল করতে হবে, আগের মতো সেনাবাহিনী থেকে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে হবে, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে, বিধি মোতাবেক জ্যেষ্ঠতা প্রদান করতে হবে এবং অধ্যক্ষের অফিসে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে।
এনটিআরসিএর সুপারিশ ছাড়াই প্রতিষ্ঠাটিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে, তারা এনটিআরসিএর সুপারিশ ছাড়া সব নিয়োগ বন্ধ করার দাবি জানান।
শিক্ষকরা বলেন, এসব দাবিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলবে। অবিলম্বে দাবিগুলো পূরণ না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন ও গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্য সাধন ও আর্থিক লাভের আশায় সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগ গত জানুয়ারি মাসে তদন্ত শুরু করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।