শাকিল আহম্মেদ (ছদ্মনাম)। লেখা-পড়া শেষে বেকার ছিলেন চার বছর। রিকশা চালক বাবার বেকার সন্তান হয়ে জীবনের কষাঘাত হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছেন পদে পদে। বেকার জীবনের ইতি ঘটাতে কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতার চার বছরে বেঁধেছেন সংসার, হয়েছেন দুই সন্তানের জনকও। সংসার- সন্তানদের নিয়ে দেখা সোনালী স্বপ্ন করোনার কষাঘাত ফিকে করেছে এই শিক্ষকের।
করোনার মধ্যেও সবশ্রেণির মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে পারলেও ফেরেননি কিন্ডার গার্টেন শিক্ষকরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এই সেক্টরের শিক্ষক-কর্মচারীরা। করোনার কষাঘাত অনেকটাই কাবু করে রেখেছে তাদের। যেকানে প্রতিদিনের খাদ্য যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। সেখানে ঈদে কিছু কেনা-কাটা বোঝার ওপরে শাকের আটির মতো।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
গতকাল রোববার সকালে এভাবেই একজন কিন্ডার গার্টেন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলছিলেন নিজের কথা। তিনি আরও বলেন, ‘টাকা-পয়সা নেই, এর উপরে ঈদ। নিজের না হলেও স্ত্রী, সন্তানের জন্য কিছু করতে হবে। স্ত্রী সব বোঝে, কিন্তু ছোট ছোট সন্তানরা তো আর বোঝেনা। অটোরিকশা চালাচ্ছি, যা উপার্জন হচ্ছে, তাতে নিজেরা খাচ্ছি ও সঙ্গে ধার পরিশোধ করছি।’ ঈদের কেনা-কাটার বিষয়ে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঈদের আনন্দ আমাদের জন্য না। কিভাবে পেটে খাবার দেবো এই চিন্তায় দিন যায়।’
শাকিলের মতো এমন হাজারো কিন্ডার গার্টেন শিক্ষক সারাদেশে রয়েছেন। শিক্ষক জীবন শেষে অনেকেই পাননি চাকরি। তাই বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতার এই মহান পেশাকে। কিন্তু করোনা নামের এই মহামারি ক্লাস রুমের চক-ডাস্টার কেড়ে নিয়ে ধরিয়েছে অটোরিকশার স্টিয়ারিং। অনেকে করোনার দীর্ঘ দুই বছরে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পেশাও।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ৪২৪টি কিন্ডার গার্টেন (কেজি স্কুল) রয়েছে। এই সব কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষক-কর্মচারী মিলে কমপক্ষে ১৫ জন করে ধরা হলেও ৬ হাজার ৩৬০ জন। করোনার এই সময়ে তারা আজ বেকার।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
জানা গেছে, শুধু রাজশাহী নগরীতে (বোয়ালিয়া) কিন্ডার গার্টেন রয়েছে ১৩৩টি। পবায় ৭৩টি, গোদাগাড়ীতে ৪৫টি, চারঘাটে ২৩টি, তানোরে ১৩টি, দুর্গাপুরে ১৮টি, পুঠিয়ায় ১৮টি, বাগমারায় ৫৪টি, বাঘায় ২৩টি ও মোহনপুরে ২৪টি কিন্ডার গার্টেন রয়েছে।
মামুন-অর-রশিদ নামের এক কিন্ডার গার্টেন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘এই বয়সে পেশা পরিবর্তন করা সম্ভব না। কিন্ডার গার্টেন ও প্রাইভেট পড়িয়ে চলি। করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধের কারণে বেতনও বন্ধ। আমরা কিভাবে চলছি, সেটি আমরাই জানি।’
রাজশাহী কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম সারওয়ার স্বপন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘গোটা শরীরে ফোঁড়া, কি করবো বলেন। দুই একটা হলে হয়। কিছু করার নেই। এই শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কিছু করতে পারলাম না।’