সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত । তবে এখন এসব পরীক্ষার্থীর ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম যথাযথভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করা যেতে পারে। আর সম্ভব হলে মূল্যায়নটা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নেয়া যেতে পারে। বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের আগাম ঘোষণা থাকলে শিক্ষার্থীরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
এই আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিশ্লেষক বলেন, প্রথমেই আমি সরকারকে সাধুবাদ জানাব এজন্য যে, এই সিদ্ধান্তের ফলে একটা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার অবসান হয়েছে। এখনও সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি। ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আরও অন্তত ১৪ লাখ অভিভাবক আছে। শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষা খাতের কর্মকর্তাদের দৈনিক পরীক্ষা গ্রহণের কাজে বের হতে হতো। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা কী সম্ভব হতো? আবার গ্রামে কলেজ নেই, অধিকাংশ শহরাঞ্চলে। কেউ মেসে আবার কেউ লজিং থাকে। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলে তারা বিপাকে পড়ত। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সব বিবেচনায় এর চেয়ে ভালো আর কোনো নির্দেশনা এই মুহূর্তে নেই।
তিনি বলেন, অতীতের দুটি পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটা মন্দ নয়। তবে আরেকটি কাজ করা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে, এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা শুধু পরীক্ষায় বসার অপেক্ষায় ছিল। সেই হিসেবে তারা শতভাগ প্রস্তুত ছিল। দু’বছর ধরে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়নও হয়েছে। তাই এসব শিক্ষার্থীর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে কলেজে অভ্যন্তরীণ এবং নির্বাচনী পরীক্ষার ফলও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। কাজটি কঠিন হলেও ভেবে দেখা যেতে পারে।
সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, তাদের ভর্তি পরীক্ষার কী হবে। ভর্তিতে সমস্যা হবে কিনা। চাকরিতে প্রবেশে সমস্যা হবে কিনা। বিদেশে পড়তে গেলে সমস্যা হবে কিনা। আমি মনে করি, উদ্বেগ প্রশমনের ব্যবস্থাও সরকারের কাছে আছে। পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে ভিসিদের নিয়ে গঠিত কমিটিতে। এটা ইতিবাচক। তারাই এখানে ভর্তি সংক্রান্ত সমাধান রাখতে পারবেন। বিদেশে পড়তে যান খুব কমসংখ্যক। তাদেরও চিন্তার কিছু নেই। কেননা সারাবিশ্বেই একই অবস্থা। ইতোমধ্যে গত জুনে ‘এ’ লেভেল (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষার ফল একই প্রক্রিয়ায় হয়েছে। তাই এ বিষয়টি বিশ্বের কাছে একমাত্র দৃষ্টান্ত নয়। অন্যান্য দেশও তাই করেছে।
তাছাড়া বিদেশে কেউ পড়তে যেতে চাইলে তাকে আইইএলটিএস, স্যাট, জিআরই, টোফেল ইত্যাদি পরীক্ষা দিতে হবে। সুতরাং মূল্যায়ন ছাড়া কেউ থাকবে না। তবে চাকরির বাজারে যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সেজন্য সরকার আহ্বান রাখতে পারে।
বিকল্প মূল্যায়নের একটা পন্থা আছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়। তাতে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই মূল্যায়নের দিকটি মাথায় রেখে পরীক্ষাটি নিতে পারে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের এখন উচিত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। সেটার এখনই সময়।