টিকা নিশ্চিত করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, অনেক দেশই করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্নিষ্টদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সব শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। টিকা সবাইকে বিনামূল্যে দিতে হবে, আমি তা মনে করি না। সামর্থ্য অনুযায়ী কাউকে বিনামূল্যে, কাউকে অর্ধেক দামে এবং সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে পুরো মূল্য নিয়ে টিকা দেওয়া যেতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ঝরে পড়ার চ্যালেঞ্জ কতটা রয়েছে? দৈনিক শিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই আশঙ্কা করছেন করোনা-পরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ঝরে পড়া ব্যাপক হারে দেখা যাবে। আমিও তা-ই মনে করি। কতটা তথ্য আমাদের রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে যদি যথাযথ তথ্য থাকে- তার কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে, প্রতিষ্ঠান খোলার পর কতজন আসেনি, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ে এক মাসের মধ্যে যারা আসেনি, তাদের অবস্থা জেনে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এজন্য তথ্যভিত্তিক প্রস্তুতি প্রথমেই থাকা চাই।
তিনি বলেন, গত বছরের মার্চ মাসে দেশে যখন প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, স্বাভাবিকভাবেই সবার মধ্যে একধরনের আতঙ্ক ছিল। আমরা দেখেছি, একে একে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরপর ধীরে ধীরে সব খুললেও এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হয়নি। এখন বলা চলে সবই প্রায় স্বাভাবিক। হাট-বাজার, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, পরিবহন- কোনো কিছুই বন্ধ নেই। দীর্ঘ সময় শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকার ফলে আমাদের শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।
করোনার এ সময়ে অনলাইনসহ নানাভাবে দূরবর্তী শিখন কার্যক্রম সম্পর্কে ছিদ্দিকুর রহমান বলের, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনলাইন কিংবা অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে দূরবর্তী শিখন কার্যক্রমের বিকল্প ছিল না, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশই কেবল এর মাধ্যমে শেখার সুযোগ পেয়েছে। অধিকাংশই সে সুযোগ পায়নি। তার ওপর শিশুদের জন্য সশরীরে শিক্ষাঙ্গনে উপস্থিত থেকে শেখা আর অনলাইনে শেখা এই দুইয়ের মধ্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের 'অ্যাসাইনমেন্ট' দেওয়া ও তার সুফল সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের ধারণা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, অ্যাসাইনমেন্ট হলো শিক্ষার্থী যা শিখেছে তার চর্চা। শিখন স্থায়ী করার জন্য এটি জরুরি। কিন্তু কেউ কিছু না শিখেই সে বিষয়ে কীভাবে অ্যাসাইনমেন্ট করবে? শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলেও তাতে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অনেকে বই দেখে হুবহু তার কপি করেছে। তাহলে তা শেখার ক্ষেত্রে কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে?
উচ্চ মাধ্যমিকে অটোপাস দেওয়ার পরও ফল প্রকাশে দেরি হওয়ার কী কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অবস্থার আলোকে পরীক্ষা না হয়ে জেএসসি ও এসএসসির ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আমি আগেও বলেছি এর মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যাহোক, করোনার কারণে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ডিসেম্বরে তার ফল প্রকাশের কথা বলা হয়। দৃশ্যত ফল প্রকাশে দেরি হওয়ার কথা না থাকলেও কিছু জটিলতা তো আছেই। জেএসসি ও এসএসসির ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল নির্ধারণ করাটা সহজ নয় এ কারণে যে, উভয় পরীক্ষায় বিষয় এক নয়।
তিনি আরো বলেন, আবার অনেকে বিভাগ পরিবর্তন করেছে। কেউ মাদ্রাসা থেকে এসেছে। ফলে এসব মিলিয়ে ফল নির্ধারণে যেমন ঝামেলা রয়েছে, তেমনি আমার ধারণা ফল প্রকাশের পরও অনেকে সংক্ষুব্ধ হতে পারে।