‘মিয়ানমারের নাগরিকদের এখনই ফেরত পাঠানো প্রয়োজন’ - দৈনিকশিক্ষা

‘মিয়ানমারের নাগরিকদের এখনই ফেরত পাঠানো প্রয়োজন’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে অনেকগুলো ক্ষেত্রে পরস্পরের হাত ধরার পাশাপাশি এই অঞ্চলের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের এখনই ফেরত পাঠানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ দক্ষিণ এশিয়া, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ১২টি দেশের প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত ও মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ কে আব্দুল মোমেন এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ শনিবার শুরু হওয়া দুই দিনের একটি সম্মেলনে আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে একত্র হয়েছেন। সরকারি পর্যায়ের না হলেও ভারতের একাধিক রাজ্যের সরকারি প্রতিনিধি, মন্ত্রী, কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও যোগ দিয়েছেন সম্মেলনে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করে আব্দুল মোমেন বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকেরা বাংলাদেশে নির্দিষ্ট অঞ্চলে রয়েছেন। সেখানে অপরাধ ও উগ্রবাদ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ মিয়ানমারের নাগরিকদের বাসস্থান ও খাদ্য দিয়ে চলেছে; তাঁদের আশ্রয় সুরক্ষিত করছে। কিন্তু এটা বরাবরের জন্য চলতে পারে না।

এটা একটা ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা। তাঁদের ফেরত পাঠানোর কাজ এখনো শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে কিছু অঞ্চলে, যেখানে তাঁরা রয়েছেন, সেখানে অপরাধ ও উগ্রবাদ বাড়ছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাব্যবস্থাকে এ থেকে মুক্ত রাখতে হবে, বলেন আব্দুল মোমেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের এখনই তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন। কারণ, তাঁরা নিজেদের দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। এ লক্ষ্যে এ অঞ্চলের সব দেশের সহায়তা চান তিনি।

অধিবেশনে বক্তা হিসেবে দিল্লিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়ান অংয়ের নামও রয়েছে।
দুই দিনের এই সম্মেলনের মূল বিষয় নদী ও পানি। সেই সূত্রেই আব্দুল মোমেন বলেন, স্থলপথের উন্নয়নের আগেই জলপথে সভ্যতার বিকাশ হয়েছে এবং এক দেশ আরেক দেশের বন্ধুরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। জলপথের এ বিকাশ ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ স্থাপনে আরও বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জলপথে এ অঞ্চলকে জোড়া দেওয়ার প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বেশ কিছু সমস্যার কথা বলেন; যার মধ্যে নদীতে পলি জমার সমস্যা উল্লেখযোগ্য বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা সবার এবং এর সমাধানে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ, কম খরচে এটা করা যায় না। এর জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহায়তা জরুরি।’

বন্যা মোকাবিলা, উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ত পানি চাষের জমিতে ঢুকে পড়ার মতো দক্ষিণ এশিয়ার দৈনন্দিন সমস্যার উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। এসব ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্মেলনের নাম ‘নদী’ (ন্যাচারাল অ্যালাইজ ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারডিপেন্ডেনস)। এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স নামের একটি সংস্থা এটির আয়োজক। বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন স্তরে নদীকেন্দ্রিক সহযোগিতা গড়ে তোলাই এ সম্মেলনের লক্ষ্য বলে জানায় সংস্থাটি।

এদিকে সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর বক্তব্যে বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে উত্তর-পূর্ব ভারতকে কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে নরেন্দ্র মোদি সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

এ পদক্ষেপের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতকে নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ও এর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে জোড়ার প্রশ্নকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছে মোদি সরকার।

শুধু জলপথেই নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতকে প্রথমত বাংলাদেশ ও এরপর অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে জোড়ার কাজ বিভিন্ন স্তরে হচ্ছে। এর মধ্যে একদিকে যেমন জলপথের সংস্কার রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারের সঙ্গে এপারের রেল যোগাযোগ সুসংহত করার কাজও সমানতালে চলছে, বলেন জয়শঙ্কর।

জয়শঙ্কর আরও বলেন, এ ছাড়া সড়ক নির্মাণ ও সড়কপথে যোগাযোগের অবকাঠামো উন্নয়নেও ভারত সচেষ্ট এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ফেরতযোগ্য ঋণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই প্রকল্প কী ও বাস্তবায়নের কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা অনেকটা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন তিনি।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সম্মেলনে ইতিহাসগত কারণে ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে জোড়ার প্রশ্নে আসামের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ চীনের সঙ্গে একসময় সুদৃঢ় ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল ভারতের। এর কেন্দ্রে ছিল সিল্ক রুট, যা বিভিন্নভাবে এশিয়ার দুই অংশকে জুড়ে রেখেছিল।

বিশ্বশর্মা বলেন, আসামের কিছু ভৌগলিক সুবিধা রয়েছে। মিয়ানমার, চীন, ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের সীমান্ত রয়েছে। এ কারণে আসাম উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে বা অঞ্চলে প্রবেশের প্রধান দরজা। এ অঞ্চলের প্রায় সব দেশেরই সমস্যা বন্যা, বিশেষ করে আসাম ও বাংলাদেশে। এ সমস্যা মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন তিনি।

সম্মেলনে অংশ নেবেন বেশ কয়েকটি দেশের নদী বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরাও। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে জাপান, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার।

ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও বক্তব্য দেন সম্মেলনে। আরও বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের নদী বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাতসহ এ অঞ্চলের একাধিক নদী বিশেষজ্ঞ। শেষ অধিবেশনের প্রধান বক্তা ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।

ভারতে গঙ্গা অনেকগুলো রাজ্যের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিশাল রাজ্য উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। রাজ্যগুলোর কোনো সরকারি প্রতিনিধির নাম বক্তাদের তালিকায় নেই।

সূত্র : প্রথম আলো

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.023638010025024