‘যে ছাত্রদের পড়িয়েছি তারাই আমার কবজি কেটেছে’ - দৈনিকশিক্ষা

‘যে ছাত্রদের পড়িয়েছি তারাই আমার কবজি কেটেছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক |
ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বিছানায় শুয়ে কবজি বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন (৫২)। যে হাতে লিখে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন তিনি সেই ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে। এই শিক্ষকের কাছে সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, তিনি যে ছাত্রদের পড়িয়েছেন তারাই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার কবজি বিচ্ছিন্ন করেছেন।
 
আহত শিক্ষক কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম আলাউদ্দিন আহম্মেদ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রায় ১২ বছর ধরে ওই কলেজে শিক্ষকতা করেন তোফাজ্জেল হোসেন।
 
কুপিয়ে কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় কুমারখালী থানায় তোফাজ্জেল হোসেনের বড় ছেলে একটি মামলা করেছেন।
 
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে কলেজ থেকে বের হয়ে বংশীতলা এলাকা দিয়ে শহরে যাচ্ছিলেন তোফাজ্জেল হোসেন। এ সময় তাকে কয়েকজন সন্ত্রাসী ঘিরে ধরে পেটাতে থাকেন। তিনি সেখান থেকে দৌড়ে কয়েক শ গজ দূরে নির্মাণাধীন একটি সেতুর ওপর যান। সেখানে অবস্থান নেওয়া আরও ১০-১২ জন সন্ত্রাসী রামদা-চাপাতি দিয়ে তাকে কোপাতে থাকেন। এ সময় তার ডান হাতের কবজি থেকে ওপরের এক ইঞ্চিসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 
 
শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন পড়ে গেলে তার পিঠেও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন হামলাকারীরা। এরপর হামলাকারীরা চলে গেলে স্থানীয় লোকজন তোফাজ্জেলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই দিন সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি কোপে তার বাঁ পাজর, মেরুদণ্ডের হাড়সহ শরীরের ১৩টি স্থানে গুরুতর জখম হয়। কুষ্টিয়া জেলারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষে ওই দিন রাতেই ঢামেকে নিয়ে আসা হয় তাকে।
 
ঢামেক হাসপাতালের পুরোনো ভবনের নিচতলার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তোফাজ্জেল হোসেনের। শুক্রবার (৩ জুন) ওই ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বিছানায় তোফাজ্জেল হোসেনকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল তার। খুব ধীরে ধীরে দু-একটি কথা বলছেন তিনি।
 
কথা বলতে চাইলে কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ১০ থেকে ১২ জন মিলে রামদা আর চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছেন। আমিতো কোনোদিন কারও ক্ষতি করিনি। দীর্ঘ ১২ বছর যে হাত দিয়ে লিখে শিক্ষাদান করে আসছি সেই হাত কেটে দিল সন্ত্রাসীরা! যারা হামলা করেছেন তাদের সবাইকে আমি চিনি। এলাকায় তারা চুরি, ডাকাতি করেন।
 
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আহত এই শিক্ষক বলেন, সবচেয়ে কষ্টের কথা আমি যে ছাত্রদের শিক্ষা দিয়েছি তারাই আমাকে কুপিয়েছে। হামলায় অংশ নেওয়া তিন-চারজন আমার সরাসরি ছাত্র। যাদেরকে এই হাতে শিক্ষা দিলাম সেই ছাত্ররাই আমার হাতের কবজি কেটে দিয়েছে! এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবারও শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চান বলে জানান এই শিক্ষক।
 
তোফাজ্জেল হোসেনের ছোট ছেলে নাজমুস হাসিব বলেন, আমার বাবা খুব সহজ-সরল একজন মানুষ। তিনি কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারেন না। সন্ত্রাসীরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে আমার বাবার আজকের এই পরিস্থিতি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072629451751709