‘সরকারি অস্ত্র দিয়ে খুব কাছ থেকে স্ত্রীকে গুলি করেন সৌমেন’ - দৈনিকশিক্ষা

‘সরকারি অস্ত্র দিয়ে খুব কাছ থেকে স্ত্রীকে গুলি করেন সৌমেন’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি |

কুষ্টিয়ায় কাস্টমস মোড় এলাকায় স্ত্রী আসমা খাতুনকে খুব কাছ থেকে গুলি করেন এএসআই সৌমেন। পালিয়ে গিয়েও রক্ষা পায়নি ছেলে রবিন। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মা আসমা খাতুনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বাবা এএসআই সৌমেন রায় যখন পিস্তল বের করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করেন, তখন ভয়ে দৌঁড়ে পালাতে থাকে রবিন। তখন সৌমেন পেছন থেকে গুলি করে রবিনকে হত্যা করেন। এরপর খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেন স্ত্রী আসমা খাতুনকে।এ হত্যাকাণ্ডে সৌমেন সরকারি অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করেছে বলেও নিশ্চিত করেছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ।

ছবি : সংগৃহীত

পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায় রোববার সকালে হত্যাকাণ্ডে ১১ রাউন্ড গুলি খরচ করেছেন বলেও জানা গেছে জেলা পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে।

রোববার সকালে কুষ্টিয়ার কাস্টমস মোড় এলাকায় স্ত্রী আসমা খাতুন, ছেলে রবিন ও স্ত্রীর ‘কথিত প্রেমিক’ শাকিল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেন খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত এএসআই সৌমেন রায়। এ হত্যাকাণ্ডে সৌমেন সরকারি অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করেছে।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সৌমেনকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বেশকিছু তথ্য দিয়েছে। পুলিশ সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছে। 

জেলা পুলিশের সিনিয়র ক’জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ত্রীর ‘পরকীয়ার’ জের ধরে সৌমেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন। স্পর্শকাতর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে তদন্ত শুরু করেছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। ইতোমধ্যে খুলনার ফুলতলা থানায় সৌমেনের বিষয়টি জানানো হয়েছে।  জেলা পুলিশের সূত্রটি জানিয়েছে, ওয়ারেন্ট জারির কথা বলে সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানা থেকে সরকারি অস্ত্র ও গুলি নিয়ে এসেছিলেন।

স্ত্রীকে খুব কাছ থেকে গুলি করে সৌমেন

কাস্টমস মোড় এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানান। তাদের ভাষ্যে, রোববার বেলা ১১টার দিকে সৌমেন তার স্ত্রী আসমা ও ছেলে রবিনকে নিয়ে কাস্টমস মোড় এলাকায় আসেন। পরে একটি বিকাশের দোকানের সামনে তাদের সঙ্গে দেখা হয় শাকিল হোসেনের।

শাকিল হোসেনের পরিবার ও পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছেন, বিকাশের এজেন্ট শাকিলের সঙ্গে ‘পরকীয়া সম্পর্ক’ চলছিল আসমার।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

আসমা, রবিন ও শাকিলের সঙ্গে সৌমেন ঢুকে পড়েন একটি খাবার হোটেলে। সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। হোটেল মালিক এসময় তাদের অন্যত্র চলে যেতে বলেন। এরপর তারা সেখান থেকে বেরিয়ে পাশের একটি মসজিদের গলিতে যান। সেখানেও তাদের মধ্যে বাদানুবাদ চলতে থাকে। 

একপর্যায়ে সৌমেন তার অস্ত্র বের করে মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। এরপর তিনি আসমা ও শাকিলের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। দুইবার মিস ফায়ার হলে রবিন দৌঁড়ে পালাতে থাকেন। সে সময় সৌমেন পেছন থেকে গুলি ছুঁড়লে নিহত হয় রবিন। 

এরপর শাকিল ও আসমাকে সৌমেন কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেন। তিনজনকে খুন করতে সৌমেন ১১ রাউন্ড গুলি খরচ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যা পরে পুলিশও নিশ্চিত করেছে।

এরপর ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে সৌমেনকে আটক করেন। এসময় পুলিশ এসে সৌমেনকে ধরে নিয়ে একটি বাড়িতে আটকে রাখে। ক্ষুব্ধ জনতা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়। 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘নিহতদের মাথাসহ শরীরের অন্য স্থানে গুলি করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয়েছে। মরদেহগুলো হাসপাতালের মর্গে আছে।’

‘পদোন্নতির পর আসমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সৌমেন’ 

২০০৪ সালে পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি পান সৌমেন। তার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বরইচারা গ্রামে। ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ায় সৌমেনের পোস্টিং হয়। এরপর তিনি উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এর মধ্যে আসমার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন সৌমেন কুষ্টিয়ার মিরপুর, ইবি, কুমারখালী থানাসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে সৌমেন ২০০৫ সালে আথি রায় নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। সেই ঘরে তার এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তারা খুলনায় বসবাস করে। 

সৌমেনের সঙ্গে বিয়ের আগে আসমার আরও দুটি বিয়ে হয়। প্রথম ঘরে এক মেয়ে ও দ্বিতীয় ঘরে রবিনের জন্ম হয়। আসমা পরে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে আঁখি নাম ধারণ করেন। আসমার গ্রামের বাড়ি বাগুলাটের নাতুড়িয়া গিয়ে কথা বলে প্রতিবেশিরা জানান, এলাকায় তারা থাকেন না। পরিবারসহ কুষ্টিয়ায় আমলাপাড়ায় ভাড়া থাকেন। পুলিশের ওই সূত্র জানায়, এরপর আখিকে সে শহরে বাসা ভাড়া করে দেয়। মাঝেমধ্যে সে এসে তাদের সাথে থাকত। 

‘শাকিলকে ঘিরে চলছিল পারিবারিক টানাপড়েন’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সৌমেন রায় পুলিশকে যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে শাকিলের সঙ্গে আসমার ‘পরকীয়ার সম্পর্কই’ এ খুনের প্রধান কারণ’ হতে পারে বলে ধারণা করছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। 

জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে এ তথ্য দিয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলছে না কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক কারণ আমরা জানতে পারিনি। এ বিষয়ে তদন্ত করে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’

আসমার সঙ্গে বেশ কয়েকজন যুবকের সম্পর্ক চলছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সৌমেন।বিষয়টি জানতে পেরে সৌমেন কললিস্টসহ বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেন। সর্বশেষ শাকিলের সঙ্গে আসমা ওরফে আঁখির সম্পর্ক চলছিল বলে সৌমেন নিশ্চিত হয়। 

গত শনিবার সৌমেন আঁখিকে ফোন করে জানান, তাদের তিনি খুলনায় নিয়ে যাবেন। পরে কুষ্টিয়ায় এসে সৌমেন শাকিল প্রসঙ্গে আঁখির সঙ্গে তর্কে জড়ান।

কুষ্টিয়ার সাঁওতায় নিহত শাকিলের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি 

কুষ্টিয়ার সাঁওতায় নিহত শাকিলের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা মরিয়ম খাতুন ও ভাবি লতার সঙ্গে। তারা বলেন, ‘শাকিলের সঙ্গে আসমার চেনাজানা ছিল। আমরা জেনেছি, তাদের মধ্যে ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। এর বাইরে কোনো গোপন সম্পর্ক ছিল কি না, তা আমরা জানি না। একদিন আমাদের বাড়িতে সৌমেন আসেন। তিনি জানান গোপন সম্পর্কের কথা। শাকিল যেন আসমার সঙ্গে না মিশে, সে জন্য আমাদের বলে যায়।’

আসমার গ্রামের বাড়ি বাগুলাটের নাতুড়িয়া গ্রামে। তার প্রতিবেশীরা জানান, 'আসমার পরিবারের কেউ গ্রামে থাকে না। তারা কুষ্টিয়াতে ভাড়া বাসায় চলে গেছেন।' কুষ্টিয়ার আমলাপাড়ায় আসমাদের বাসাতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালেও আসেননি কেউ।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075359344482422