ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শহর শাখা-সংলগ্ন মাঠে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়েছেন। মঙ্গলবার মাঠটিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করার সময় কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, মাঠটি অবশ্যই উন্মুক্ত রাখতে হবে। এখানে আমাদের কিশোর-তরুণরা খেলাধুলা করতে আসে। অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে আসেন বেড়াতে। এটি বন্ধ করা হলে কলেজের বিশেষ কোনো লাভ হবে না। বরং বঞ্চিত হবে শহরবাসী।
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, শহরের প্রাণ হচ্ছে এই মাঠ। প্রাচীর দেওয়া হলে শহরবাসীর জন্য দম ফেলার জায়গাটুকু আর থাকবে না।
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খোকন বলেন, এই মাঠ জনগণের সম্পত্তি। এটিকে দেয়াল দিয়ে আটকানো যাবে না। করোনার এ দুঃসময়ে এ মাঠেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে। মাঠটি দেয়াল দিয়ে আটকে দেওয়ার এ উদ্যোগ গণবিরোধী।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নন্দিতা সুরক্ষার সভাপতি তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি বলেন, বিস্তৃত এ মাঠটিতে শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে, বৃদ্ধরা সময় কাটান, ডায়াবেটিস রোগীরা হাঁটাহাঁটি করেন। মাঠটির কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশও রক্ষিত হয়। তাই এ মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা জরুরি।
আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমরা করব জয়-এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ খান বলেন, দেয়াল দিয়ে ঘিরে দিলে এই মাঠে সবার চলাফেরা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন মাদকসেবীরা এখানে তাদের আস্তানা গাড়বে। এই মাঠ শহরের প্রাণ। যে কোনো উৎসবে মানুষের মন খুলে আড্ডা দেওয়ার প্রথম পছন্দ থাকে এই রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ।
সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ফরিদপুরের সাধারণ সম্পাদক কাজী সবুজ বলেন, নগরজীবনে উন্মুক্ত খেলার মাঠের খুব অভাব। নগরায়ণের চাপে মাঠগুলো আমরা হারাতে বসেছি। তাই আমরা চাই মাঠটিকে প্রাচীর দিয়ে আবদ্ধ না করে উন্মুক্ত রাখা হোক।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ওই মাঠের মালিকানা রাজেন্দ্র কলেজের না হলেও ওটি রাজেন্দ্র কলেজই ব্যবহার করে আসছে। আগামীতে কলেজের মাঠ হিসেবেই এটি থাকবে। শহরের মধ্যে ওই একটি বড় মাঠই আছে, যেখানে মানুষ গিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারে, ঘুরতে পারে, খেলাধুলা করতে পারে। এ মাঠটি প্রাচীর দিয়ে আটকে দেওয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। শহরের সব শ্রেণির মানুষের স্বার্থেই মাঠটি উন্মুক্ত রাখা জরুরি।