আবরার হত্যার বিচার চাই - দৈনিকশিক্ষা

আবরার হত্যার বিচার চাই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমি নরম মনের মানুষ। যেকোনো হত্যাকাণ্ডই আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। এর মধ্যে কিছু হত্যাকাণ্ড হৃদয়-মন-শরীরকে বেশি প্রভাবিত করে। ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু। ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ গুজবকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে একের পর এক গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যার ধারাবাহিকতায় তাঁকেও ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

এ হত্যাকাণ্ডটি আমার মস্তিষ্কের নিউরনে দীর্ঘমেয়াদি অনুরণন সৃষ্টি করে। এর রেশ না কাটতেই বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাসলিমা বেগম ও আবরার হত্যার পর ইসলাম ধর্মের শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তা বারবার মনে পড়ছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শপথ সেই মহান সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ। দুনিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না মানুষের প্রতি এমন এক সময় আসবে, হত্যাকারী জানবে না সে কেন হত্যা করছে আর নিহত ব্যক্তি জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে। বলা হলো : সেটা কিভাবে হবে? বললেন : হারাজ (গুজব, হুজুগ, অলীকতা, বিবেকহীনতা, মূর্খতা, নির্বুদ্ধিতা, অন্যায় হত্যা, বিচারহীনতা ও সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ ইত্যাদি)-এর কারণে।’ (মুসলিম) অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের আগে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বেশি হবে, সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে, ফিতনা প্রকাশিত হবে, হত্যাকাণ্ড-খুনখারাবি বেড়ে যাবে, সম্পদের আধিক্য হবে।’

(বুখারি) সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! তখন কি মানুষের বুদ্ধি-বিবেক থাকবে না?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘না। সে সময় মানুষ বিবেকশূন্য হয়ে যাবে এবং মনে করবে সে-ই সঠিক। আসলে তা নয়।’ (মুসনাদে আহমাদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের আলামত হলো ‘হারাজ’! বলা হলো : ‘হারাজ’ কী? তিনি বললেন : ‘মিথ্যা ও হত্যা। এই হত্যা হবে অজ্ঞতাপ্রসূত, স্বার্থপরতায় এবং খামখেয়ালিপনায়।’ (ফাতহুল বারি) লক্ষ করলে দেখা যাবে, সমাজে খুনখারাবি ক্রমাগত বেড়েই চলছে। তাসলিমা বেগম ও আবরারের হত্যাকাণ্ড দুটি বিশ্লেষণ করুন, দেখবেন এই হত্যার পেছনে রয়েছে গুজব, হুজুগ, অলীকতা, বিবেকহীনতা, মূর্খতা, নির্বুদ্ধিতা, অজ্ঞতা, স্বার্থপরতা এবং খামখেয়ালিপনা তথা অন্যায় হত্যা।

আবরার একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেধাবী সন্তান। পত্রিকায় পড়েছি সে বুয়েট ছাড়াও ঢাকা মেডিক্যাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং রাশিয়ায় পারমাণবিক গবেষণা বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের সুবাদে অনুভব করতে পারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কতটা কঠিন। আর সেখানে মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত একজন শিক্ষার্থী কতটা মেধাবী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্নগুলো মূলত সন্তানকে কেন্দ্র করেই বেড়ে ওঠে। আবরারকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর পরিবারের, বিশেষ করে একজন অবসরপ্রাপ্ত বাবা ও শিক্ষিকা মায়ের বাড়ন্ত স্বপ্নগুলোর অকালমৃত্যু হলো। আবরারের নৃশংস হত্যা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আমার মনে বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—এক. প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযানের প্রথম পদক্ষেপে হত্যার চেয়ে ছোট অপরাধে চাঁদাবাজি ইত্যাদির কারণে শোভন-রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিলেন। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত বন্ধ করে দিলেন। এমন পরিস্থিতির রেশ না কাটতেই বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা কিভাবে একজন ছাত্রকে রুমে ডেকে নিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে হত্যা করতে পারল? ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রীর বার্তা যে ছাত্রলীগ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না কিংবা মানতে চায় না, সেই ছাত্রলীগকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। রাজনীতিতে শুদ্ধাচার ফিরিয়ে আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে যে ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা পালনের কথা, সেই ছাত্রলীগ কেন জনমনকে বিষিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত হলো, তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে। দুই. ধারণা করা হচ্ছে, গত ৫ অক্টোবর ফেসবুকে আবরারের একটি স্ট্যাটাসের কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আবরারের সেই স্ট্যাটাসটি ছিল—‘১. ’৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিচ্ছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মোংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সেই মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে। ২. কাবেরী নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না, সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড় লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব। ৩. কয়েক বছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব। হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন—

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মত সুখ কোথাও কি আছে

আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

হতে পারে আবরারের এই বক্তব্যের সঙ্গে বুয়েট ছাত্রলীগের কেউ কেউ একমত নয়। আবরারের কিছু বক্তব্য সঠিকও নয়। আমি নিজেও ভারতের কিছু অযৌক্তিক আচরণকে অগ্রহণযোগ্য মনে করি, বিরোধিতা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নানা সময়ে কিছু আচরণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন; যেমন—বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুযোগ করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানির বিষয়ে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘পানি না এলে ইলিশ যাবে কী করে?’, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আগামীতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নির্ভর করবে তিস্তার পানির ওপর’, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর মর্মভেদী রসিকতা করে বলেছেন, ‘রাঁধুনিকে বলে দিয়েছি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করতে’। আমাদের অনেক বিপ্লবী বুঝতে চান না পৃথিবীর সব জায়গায়ই বড় প্রতিবেশী নাজায়েজ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিতে অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধেও সমঝোতা করতে হয় রাষ্ট্র ও জনগণের ভবিষ্যৎ স্বার্থ বিবেচনা করে; বিশেষ করে প্রতিবেশীর সঙ্গে। কেউ কেউ তাত্ক্ষণিক লাভ-ক্ষতিকে বিবেচনায় নিয়ে বুঝে না বুঝে সমঝোতার বিরোধিতা করতেই পারে। তাই বলে পিটিয়ে হত্যা? বুয়েট ছাত্রলীগে কি কেউ ছিল না যে আবরারের বক্তব্য খণ্ডন করে ফেসবুকে পোস্ট দিতে পারে? আবরারের পোস্টের নিচে যুক্তি দিয়ে মন্তব্য করতে পারে? পত্রপত্রিকায় লিখতে পারে? কিংবা আবরারের বক্তব্যের সাময়িক অসারতা প্রমাণ করতে অনুমাননির্ভর পোস্ট না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ করতে? প্রতিপক্ষকে হত্যা-নির্যাতন করে যদি আপনি লাইমলাইটে আসতে চান, তাহলে বুঝবেন আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী নন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মতদ্বৈধ ছিল, ব্যক্তিগত বৈরিতা ছিল না, শত্রুতা ছিল না। বঙ্গবন্ধু প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের শুধু সম্মানই করতেন না, বরং অপরাধের দায়ে জেলবন্দি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতার পরিবারকে অর্থ সাহায্য পাঠাতেন। বঙ্গবন্ধুর কট্টর সমালোচক মওলানা ভাসানীকে বঙ্গবন্ধু নিয়মিত অর্থ সাহায্য ও জিনিসপত্র পাঠাতেন। তিন. বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময়ও তো কেউ ঘাতক, ভ্রাতৃহন্তারক, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ বা দাগি অপরাধী হিসেবে ভর্তি হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এদের অনেকেই ভ্রাতৃহন্তারক, নৃশংস খুনি বা ঘৃণ্য অপরাধী হয়ে ওঠে। তাহলে কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাতক হওয়ার, চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ হওয়ার প্রশিক্ষণ হয়? কিন্তু কেন? আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তো স্বায়ত্তশাসিত। স্বায়ত্তশাসন মানেই তো রাষ্ট্রের ভেতরে আরেক রাষ্ট্র। তাহলে কি আমাদের স্বায়ত্তশাসন পরিচালনায় বড় রকমের গলদ রয়েছে, যা অপরাধী তৈরিতে সহায়তা করছে? চার. একটা সময় নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হতো শিবিরের হাতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা-নির্যাতনের খবর। এখন একই অপরাধে ছাত্রলীগ শিরোনাম হচ্ছে। সহিংসতার মাপকাঠিতে তাহলে শিবির আর ছাত্রলীগের রাজনীতির পার্থক্য থাকল কোথায়? পাঁচ. হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বুয়েট উপাচার্যের নির্লিপ্ততা, ক্যাম্পাসে না আসা, ব্যস্ততার অজুহাত উত্থাপন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় তাঁর অযোগ্যতাই প্রমাণ করে। ছয়. হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযুক্তদের ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, গ্রেপ্তার, পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া এবং বিচারের আশ্বাসের পরও বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার, মিথ্যা ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রচার, ভারতীয় নাগরিকের বক্তব্য ভাইরাল করার চেষ্টা হত্যাকাণ্ডকে নিয়ে নষ্ট-নোংরা রাজনীতির খেলার ইঙ্গিত দেয়। ‘আবরারকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে যে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, তা ফেক। কারণ ওই ভিডিওর ভিকটিমের পরনে ব্লু জিন্স প্যান্ট আর আবরারের প্যান্টের রং কালো। দুজনের শার্টও ভিন্ন। আবার স্থিরচিত্রে পিঠে মারাত্মক জখমের চিহ্ন নিয়ে যে যুবকের ছবি দেখানো হচ্ছে তার পরনে খাকি রঙের প্যান্ট। হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ার নামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের সুস্পষ্ট অপচেষ্টা প্রতিভাত হচ্ছে। একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করা হচ্ছে, ‘বিচার চাইতে হবে কেন, বিচার করতে হবে বিচার চাওয়ার পূর্বেই হে যুবক! এখনো অনেক সময় আছে, চলে আসো জিহাদের দিকে’। এমনও স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, ‘একটা একটা হিন্দু ধরো, ধইরা ধইরা জবাই করো’। এক দিনের মাথায় গ্রাফিক কনটেন্টে উসকানিমূলক গান রচনা করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। সাত. আবরার হত্যার প্রতিবাদে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনুশ্রী রায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসটিতে তিনি লিখেছেন, ‘যদিও আমি ভারতীয়, তার পরও বাংলাদেশের প্রতি আমার আলাদা একটা টান রয়েছে। কারণ আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশেরই মানুষ ছিলেন। ’৪৭-এর দেশভাগের পর ভারতে চলে আসেন। বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক এটা আমি সব সময় চাই। শুনলাম ভারত-বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। স্ট্যাটাসটা আমি পড়লাম, নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে লেখার জন্য কিভাবে নিজের দেশেরই লোক একটা ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে। এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে। সামান্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে মানুষ খুন করে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিভাবে এমন একটা দেশে মানুষ বাস করে!’ ফেসবুকের আরেক নাম ‘ফেক বুক’। আমি নিশ্চিত নই এটি ভারতীয় তনুশ্রী না বাংলাদেশি ফেক আইডির তনুশ্রী। বিশ্বের যেকোনো দেশের মানুষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার অধিকার রাখে। তনুশ্রীরও সে অধিকার আছে। আমার প্রশ্ন তনুশ্রীর কাছে, ‘কিভাবে এমন একটা দেশে মানুষ বাস করে!’ এ কথা ফেসবুকে লিখে আপনি আমার দেশকে অপমান করেছেন, এ দেশের মানুষকে অসম্মান করেছেন। এ অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? ভালো হোক মন্দ হোক আমার এই দেশ শহীদের রক্তস্নাত, মা-বোনের সম্ভ্রমের চড়া দামে কেনা। আমি যদি প্রশ্ন করি, ফেসবুকে কোনো কিছু লেখা দূরে থাক, শুধু ‘জয় শ্রীরাম’ না বলার কারণে কয়জনকে হত্যা করা হয়েছে আপনার দেশে? গরুর মাংস আছে—এই সন্দেহে কতটি হত্যাকাণ্ড আর ধর্ষণ হয়েছে আপনি জানেন কি? এমন অন্যায় হত্যা ও অসহিষ্ণু রাজনীতির কারণে শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা পত্র লেখায় আপনার দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা হয়েছে সে খবর রাখেন?

আমার মনে যত প্রশ্নই থাকুক, দাবি একটাই—আবরার হত্যার বিচার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বলেছেন শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নয়, মা হিসেবেও আপনি আবরার হত্যার বিচার করতে চান। আমরা আপনার ওপর আস্থা রাখতে চাই। আবরার হত্যাকে ঘিরে যারা নষ্ট-নোংরা রাজনীতির পাঁয়তারা করছে, তাদের সুযোগ দেবেন না। আবরার হত্যার দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নিয়ে হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দিয়ে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে প্রমাণ হয়—মানবসমাজে, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগে দানবের ঠাঁই নেই।

লেখক : মো. জাকির হোসেন। অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079529285430908