ইবির হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেল - Dainikshiksha

ইবির হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের ২১৩নং কক্ষ একটি আতঙ্কের নাম। শিক্ষার্থীদের কাছে কক্ষটি ছাত্রলীগের টর্চার সেল নামে খ্যাত। একই হলের ৪১৯নং কক্ষটিও সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের জুনিয়রদের কাছে ডেঞ্জার কক্ষ নামে পরিচিত। এই তালিকায় আরও রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২০৮ ও ২২৬নং কক্ষ। শিবির তকমা দিয়ে অথবা ব্যক্তিগত আক্রোশসহ নানা অজুহাতে দলীয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা।

বঙ্গবন্ধু হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের ২১৩নং কক্ষটিতে থাকেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী তাসনিম-ই-তারিক আবির। ওই কক্ষে ডেকে নিয়ে দলীয় কর্মী জুবায়েরকে রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।

একই গ্রুপের কর্মী জুবায়েরকে ডেকে নিয়ে শিবিরের তকমা দিয়ে নির্যাতন করেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম গ্রুপের কর্মী বিপুল খান (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ), তাসনিম-ই-তারিক আবির (বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং), মোশারফ হোসেন নীল (হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি), ফজলে রাব্বি (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ) ও শাফায়েত ইসলাম সাগর (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি)। তাকে লাথি, কিল-ঘুষি ও স্টিলের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।

একইদিন বেলা ১টার দিকে বিপুল খানের নির্দেশে রাব্বী ও সাগর একই গ্রুপের আরেক কর্মী মেহেদী হাসান নিলয়কে মোটরসাইকেল করে তুলে নিয়ে যায়। তাকে টর্চার সেলে নিয়ে উপর্যুপরি মারধর করা হয়। এতে তিনি গুরুতর জখম হন। শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি আদায়ে তাকে মারধর করা হয়। এসব ঘটনার পর ওই দুই শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়।

এরপর থেকে ছাত্রলীগের টর্চার সেলের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। তবে ছাত্রলীগের দাবি, জুবায়েরের সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা ও শিবিরের নথিপত্র পাওয়া গেছে। এজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই কক্ষে ডাকা হয়। আবির  বলেন, শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জুবায়ের জড়িত এবং এ ব্যাপারে তাদের কাছে ডকুমেন্ট আছে। তাকে নির্যাতন করা হয়নি। তিনি বলেন, তবে নিলয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ তারা পাননি।

বঙ্গবন্ধু হলের ৪১৯নং কক্ষে থাকেন আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বিশাল, আবদুল্লাহ হিমু, ওমর ফারুক ও মাহাদী। এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে তাদের বিরুদ্ধে ওই কক্ষে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দলীয় কর্মী ও সহপাঠীদের দাবি, নিজ বিভাগে প্রভাব বিস্তার ও গ্রুপ ভারি করতেই এ নির্যাতন চালানো হয়েছে।

হলের ছাদে নিয়েও তাদের ভয় দেখানো হতো। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছে চাঁদা দাবি করারও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনা গোপন রাখতে তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়। বিশালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর মাথায় তিনি পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়েছেন। ওই কক্ষে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুুহাতে আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ, নয়ন, আরিফ, শাকির, মীর শুভ, রিয়াদসহ অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

মঙ্গলবার শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২২৬নং কক্ষে ক্যাম্পাসের পাশের মেসের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। মেস থেকে খেতে আসা ওই শিক্ষার্থীকে ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাফায়াত হোসেন সাগর ডেকে নেন। এ সময় ফলিত রসায়ন বিভাগের তানজিরুল হুদা, লোক প্রশাসন বিভাগের মোশাররফ হোসেনসহ কয়েকজন কর্মী প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ওই শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, একদিন সন্ধ্যার পর সাদ্দাম হোসেন হল মাঠে বিশাল ও আবদুল্লাহ তাকে ডেকে নেন। এরপর শিবির সন্দেহে তারা তার মোবাইল ফোন চেক করেন। তাতে কিছু না পেলে স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্য চড়-থাপ্পড় মারা হয়। এরপর ডেঞ্জার রুমে (৪১৯) নিয়ে কয়েকজন মিলে তাকে স্টিলের পাইপ, লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনা কাউকে বললে আবার মারধর করার হুমকিও দেয়া হয়।

চাঁদা দিতে না পারায় ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। জুলাইয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর কাছে চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগ ক্যাডার বিশাল। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী দরিদ্র হওয়ায় চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন ওই শিক্ষার্থীর মায়ের অসুস্থতার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা উঠায় বিশাল। এরপর সেই টাকা নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম  বলেন, একটি সংগঠন চালাতে গিয়ে ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। দীর্ঘদিন ধরে আমি হলের বাইরে আছি। এ ঘটনাগুলো তার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. আতিকুর রহমান  বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে ঘটনা সত্য হলে তা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে হল প্রভোস্টদের নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান  বলেন, বিষয়টি তিন দিন আগে আমরা শুনেছি। ভিসিও বিষয়টি জানেন। কোনো ধরনের অপকর্ম কখনই বরদাশত করা হবে না।

সৌজন্যে : যুগান্তর

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005141019821167