খেলাধুলা যখন পড়ালেখা - দৈনিকশিক্ষা

খেলাধুলা যখন পড়ালেখা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলার কথা আমার এখনো মনে পড়ে। এর আগে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারিনি। তাই মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আর নিজের আবেগ সামলাতে পারিনি। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, যদিও উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় স্বপ্ন দেখতাম—সামরিক বাহিনীতে ঢুকব। তবে জিপিএ কম হওয়ায় এই স্বপ্নকে আর বাস্তব করতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।

চবির এই বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া গতানুগতিক ভর্তি পরীক্ষাপদ্ধতি থেকে আলাদা। প্রথমেই টিকতে হবে এমসিকিউ পরীক্ষায়। এরপর ফিটনেস এবং বিভিন্ন খেলাধুলার ওপর ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হয়। এই বিষয়ে পড়তে হলে কমপক্ষে একটি খেলায় বিশেষ দক্ষতা ও শারীরিকভাবে ফিট থাকা চাই। এভাবেই সব নম্বর যুক্ত করে একজন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।

এদিকে ভর্তির সময়, স্কুল, কলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন ইভেন্টে খেলাধুলার সনদ থাকলে তা অতিরিক্ত দক্ষতা হিসেবে যুক্ত হয়। স্কুলে পড়াকালীন জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতাম আমি। ক্রিকেটের সনদ কাজে এসেছিল খেলাধুলায় দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে। আর ফিটনেস টেস্টের অংশ হিসেবে সবার জন্য আবশ্যক থাকে ৪০০ মিটার দৌড়।

এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক বিষয়টির খুঁটিনাটি সম্পর্কে। খেলাধুলা সবার কাছেই খুব পরিচিত একটা বিষয় হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খেলাধুলা নিয়ে পড়াশোনা করার ব্যাপারটা এখনো অপ্রচলিত। গতানুগতিক বিষয়গুলোর বাইরে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে আমার মতো এই বিষয়কে বেছে নিতে পারেন।

বাংলাদেশে খেলাধুলায় উচ্চশিক্ষার ধারণা খুব বেশি প্রচলিত নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে চালু হয় খেলাধুলা–সম্পর্কিত বিভাগ ‘ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স’। বর্তমানে চার বছরের বিপিই (স্নাতক) ডিগ্রি শেষে এক বছরের এমপিই (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি নেওয়া যাচ্ছে এই বিষয় থেকে।

চবি ছাড়া বাংলাদেশের আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এই বিভাগটি। সেগুলো হলো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

চবির ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের পাঠ্যসূচিকে মূলত তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক, এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। তত্ত্বীয় অংশে পড়ানো হয় শারীরিক শিক্ষার ইতিহাস, শারীরিক শিক্ষার ভিত্তি ও গুরুত্ব, ক্রীড়া মনোবিজ্ঞান, ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা, খেলাধুলার নিয়মকানুনসহ আরও অনেক কিছু। অন্যদিকে ব্যবহারিক অংশে থাকে—ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলার কলাকৌশল ও নিয়মকানুনের সঙ্গে পরিচিতি।

এই বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ। দেশের প্রায় ৩০টি শারীরিক শিক্ষা কলেজে অধ্যাপনা, স্কুল-কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে খুব সহজেই যোগদান করতে পারেন।

এদিকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বিকেএসপি ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্পোর্টস একাডেমি ও ক্লাবগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ। এ ছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, রেডিও অথবা পত্রিকায় ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করতে পারেন। সর্বোপরি, বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। বাংলাদেশে বিষয়টি একদম নতুন হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই খেলাধুলা নিয়ে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রয়েছে ক্রীড়ার ওপর আলাদা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। তাই দেশ থেকে এই বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারেন।

এই বিষয়টি মূলত ব্যবহারিক আর খেলার মাঠকেন্দ্রিক। তাই এই বিষয়ে পড়তে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে শারীরিক দক্ষতা ধরে রাখতে হবে।

লেখক : ফাহমিদ হক, ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ, তৃতীয় ব্যাচ)।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035400390625