টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় ৩৫টি বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ কমিটি আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিজনের কাছ থেকে চার থেকে সাত লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে এসব নিয়োগ দেয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
নিয়ম বহির্ভুত নিয়োগের বিরুদ্ধে শরাতৈল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রত্যাশী সুকুমার মন্ডল বাদী হয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
ঘাটাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশবলে ৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে (৬৯) জন দপ্তরী কাম প্রহরী পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ছয় সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ কমিটি গঠন করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহীনকে সভাপতি এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিমা আক্তারকে উক্ত কমিটির সেক্রেটারী করা হয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, নিয়োগ কমিটির সভাপতি বিধি অনুযায়ী নিয়োগ না দিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় নেতা ও স্ব স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সহযোগীতায় কৌশল করে শিক্ষা অফিসের তদন্ত রিপোর্টের ব্যাখ্যা দিয়ে কখনো প্যানেলের তীয়, আবার কখনো প্যানেলের তৃতীয় স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দিয়েছেন।
জানা যায় ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ঘাটাইল উপজেলার ৩৪টি বিদ্যালয়ে ১জন করে দপ্তরী নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। ঐ সময়ে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রত্যাশীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে ফলাফল তালিকা চুড়ান্ত করলেও নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়।
দুই বছর পর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে হাইকোর্টের নির্দেশ পেলে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হয়। সে অনুসারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বের মনোনীত প্রার্থীর নাম সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত মাসিক সেবামূল্য ও চুক্তিনামা সাপেক্ষে যোগদানের অনুরোধ জানিয়ে স্ব স্ব বিদ্যালয় নিয়োগপত্র জারি করার কথা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা না করে তার একক ক্ষমতা বলে পুনরায় যাচাই বাছাইয়ের নাম করে চুড়ান্ত প্রার্থীর নাম বাদ দিয়ে দ্বিতীয় জনকে নিয়োগ প্রদান করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় ৬৯টি বিদ্যালয় দপ্তরী নিয়োগ চলমান থাকাবস্থায় নিয়োগ কমিটির সেক্রেটারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিমা আখতার ১১ জুলাই ২৮ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান। তার স্থলে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলেও তিনি প্রতিনিধিকে জানান, তিনি নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান জানান, আমি ইউএনও সাহেবকে প্রথম স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দিতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি আমার কথা না নিয়ে গোপনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন জানান, নিয়োগের নামে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার খবর আমার কানেও এসেছে। তাই আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে সকল নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।