প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারে নতুন করে সরকারী সিদ্ধান্ত আসার আভাস পাওয়া গেছে। সরকার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে দুই বছর মেয়াদী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারপ্রধান এই নতুন কর্মবিধিকে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা যায়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। শনিবার (৪ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়কে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়কে আরও জানা যায়, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় পাঁচ বছর পার হওয়ার পর। নতুন সিদ্ধান্তে চার বছর বয়সে এই পাঠ্যক্রম শুরু করার ইঙ্গিত এসেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ বছর পড়ার পর প্রাথমিক পাঠ্যক্রমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর যাত্রা শুরু হয়। আর নতুন সিদ্ধান্তে ৪+ ক্ষুদে শিশুরাই প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রথম দফায় সারাদেশের ২ হাজার ৫৮৩টি প্রাথমিক সরকারী বিদ্যালয়কে নতুন কর্মসূচীর আওতায় আনা হবে আগামী বছর থেকেই। পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করে বাকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনার কথাও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সময়ও এক থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করার নীতিগত সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিয়েছেন বলেও জানা যায়। সরকারী, বেসরকারী এবং এনজিও দ্বারা পরিচালিত প্রায় সোয়া লাখ প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশে রয়েছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে জানা যায়। নতুন এই পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমিক কর্মবিধির মাধ্যমে বাস্তবায়নে এগিয়ে নেয়ার কথাও জানানো হয়। কোমলমতি শিশুদের নিয়ে তাদের বিদ্যা শিক্ষার শুরুটা সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশু শিক্ষার শুরুটা যদি হয় আনন্দ, খেলা, গান আর নাচের মতো বিনোদনের মধ্য দিয়ে সেটাই তাদের জন্য সব থেকে বেশি গ্রহণীয় বলে মনে করছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। হাসি-খুশি আর আনন্দ আয়োজনের মধ্যেই শিশুদের আকর্ষণ তৈরি হবে বিদ্যাশিক্ষার প্রতি। জ্ঞানের সঙ্গে যদি আনন্দের সংযোগ না থাকে তাহলে শিক্ষা হয় অংশত, খন্ডিত- এমন মূল্যবান বার্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এমন ব্যবস্থা যদি দুই বছর ধারাবাহিকভাবে চালানো যায় তাহলে ক্ষুদে প্রজন্ম শুধু আনন্দই পাবে না সঙ্গে জ্ঞান-শিক্ষার প্রতিও তাদের মনোযোগ নিবিষ্ট হবে।
নতুন এই কর্মপ্রকল্প এগিয়ে নিতে গেলে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে আরও প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থাপনাকেও সংযুক্ত করতে হবে। সঙ্গত কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক, বোর্ড শিক্ষাক্রম ও শিক্ষণ সামগ্রীকেও নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, যা বর্তমান সিদ্ধান্তকে নিরন্তরভাবে এগিয়ে নিতে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করবে। প্রাথমিকভাবে দুই বছর মেয়াদী এই কার্যক্রম চালু করার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আরও বাড়ানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী এমন নতুন উদ্যোগকে সময়োপযোগী এবং সংশ্লিষ্টদের শিক্ষাকার্যক্রমের শুরুকে অনেক বেশি আনন্দ-আয়োজনে ভরিয়ে তুলবে বলে মন্তব্য করেন. যা তাদের সামনে চলার পথকে গতিশীল এবং উপযুক্ত শিক্ষাদ্যোতনায় উৎসাহিত করে তুলবে। তবে তিনি এই নতুন শিক্ষাকার্যক্রমকে পরীক্ষামুক্ত রাখার ব্যাপারেও অভিমত ব্যক্ত করেন। হাসি আর খেলায় জীবনকে সহজভাবে চিনতে নতুন এই ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি শিশুদের মনোযোগী করবে বলে বিশিষ্টজনরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে হরেক রকম কর্মপরিকল্পনায় ঢেলে সাজানো হয়েছে। মাঝপথে আরও কিছু প্রকল্প চিন্তা করা হলেও কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। যেমন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাকে বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারেও নতুনভাবে চিন্তা করা হয়েছিল। শেষ অবধি কোন কারণবশত তা এগিয়ে যায়নি। কচিকাঁচা শিশুদের নিয়ে তাদের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী হলেও বারবার রদবদলে তেমন পথপরিক্রমায় গতি হারাতেও সময় নেয় না। তার পরে শিশুরা কোন একটা সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমে অভ্যস্ত হয়ে গেলে অন্যদিকে নজর ফেরানোর সুযোগও থাকে কম। কারণ শিশু মনস্তত্ত্ব তা অনুমোদন করে না। সতর্ক এবং সাবধানতায় শিশুদের জন্য গৃহীত কর্মপ্রকল্প অত্যন্ত জোরালো ও দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেয়াই সঙ্গত এবং অত্যন্ত আবশ্যক। অকারণে, অহেতুক সিদ্ধান্তের রদবদল তাদের জীবন শুরু করার প্রয়োজনীয় সময়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সময় নেবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এসব সূক্ষ্ম নজরদারিতে আনাও সচেতন দায়বদ্ধতা।