প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপায় জটিলতা - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপায় জটিলতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে এবারও জটিলতায় পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এবার মুদ্রণকারীরা প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। এই অবস্থায় এনসিটিবি বেকায়দায় পড়ে দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান করেছে।

প্রাক্-প্রাথমিকে বই ছাপার কাগজে যে উজ্জ্বলতা থাকার কথা, সেই অনুযায়ী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। ফলে এখানে পুনঃ দরপত্র দিতে হচ্ছে। আর পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের নিজস্ব ভাষায় দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজের জন্য এখন পর্যন্ত বাজেটই পায়নি এনসিটিবি। ফলে লেখক নির্ধারণসহ বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি। 

এই অবস্থায় এনসিটিবির কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আগামী বছরের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে  প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার কাজ শেষ করা কঠিন হবে। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এমন জটিলতায় শেষের দিকে তাড়াহুড়ো করে ছাপার কারণে বইয়ে মান খারাপ হয়। বছরের শুরুতে সব বই শিক্ষার্থীদের সবাই পায় না। অবশ্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মূল্যায়ন কমিটি মনে করেছে, নতুন করে দরপত্র হওয়া উচিত, তা-ই করা হয়েছে। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বই নিয়ে কোনো  অগ্রগতি না থাকলেও যেহেতু কম বই, তাই শেষমেশ সমস্যা হবে না।

এনসিটিবির সূত্রমতে, প্রাথমিক স্তরে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জন্য ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৪০৫টি বই ছাপা হবে। মোট ৯৮টি লটে এই ছাপার কাজ হবে। এই ছাপাার কাজের জন্য গত মার্চের শুরুতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় । এতে প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করা হয় ২ টাকা ২৫ পয়সা। চলতি মাসে দরপত্র খোলার পর দেখা যায়, সর্বনিম্ন দরদাতারা প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে গড়ে পায় ২২ শতাংশ বেশি দাম দেন। এই প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতারা প্রায় সবাই দেশীয় মুদ্রণকারী। শুধু একটি প্রতিষ্ঠান ভারতের, তারা পাঁচটি লটের কাজের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছিল। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, দরপত্রের জন্য ৪২ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জটিলতার কারণে সেটি বাতিল হওয়ায় আবারও নতুন করে ৪২ দিন  সময় দিতে হবে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কার্যাদেশ দিতে আরও বেশ কিছুদিন চলে যাবে। ফলে এখানে স্বাভাবিকভাবেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমপক্ষে তিন মাস পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই কর্মকর্তা বলেন , নির্বাচনের বছর থাকায় এবার তাঁদের লক্ষ্য ছিল অক্টোবরের মধ্যেই ছাপা কাজ শেষ করে বইগুলো স্থানীয় পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়ার। কিন্ত এখন ডিসেম্বরেও সেগুলো শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিক্ষক সমিতির সভাপতি তোফায়েল অঅহমেদ খান বলেন,   এনসিটিবি বাস্তবতার সঙ্গে মিল না রেখেই প্রাক্কলিত দর ঠিক করায় এই সমস্যা হয়েছে। তারপরও গণখাতে ক্রয়বিধি অনুযায়ী এটা সমাধান করার সুযোগ ছিল। এখন নতুন করে দরপত্র হওয়ায় সময় বেশি লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এনসিটিবি যখনই তাদের কার্যাদেশ দেবে, তার ৯৬ দিনের মধ্যে বই ছাপিয়ে দেওয়া হবে। 

এর আগে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক স্তরের বিই নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন বিদেশি প্রকাশনা সংস্থাকে ঠেকাতে দেশি ছাপাখানার মালিকেরা জোটবদ্ধভাবে প্রাক্কলিত দরের ৩২ শাতাংশ কমে কাজ পান। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের মতো চলতি বছরও ‘জোট বেঁধে’ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ঠেকিয়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা কম দর দিয়ে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ নিয়েছিল ৩২ টি মুদণকারী প্রতিষ্ঠান।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বইয়ের অগ্রগতি শূন্য

পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের প্রথমবারের মতো মাতৃভাষার বই দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। চলতি বছরে দেওয়া হয় প্রথম শ্রেণির বই। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য ৪৪ হাজার ৭৮২টি বই ছাপার কথা । কিন্তু এনসিটিবির দুজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত এসব বই ছাপার বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বাজেট পাওয়া যায়নি। যে কারণে এসব বই লেখানোসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজও করা যাচ্ছে না। দরপত্র বা অন্য কিছু তো আরও পরের বিষয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, গত জানুয়ারি থেকে চারবার চিঠি দেওয়ার পর কিছুদিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সম্মতি দেয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের বই ছাপার টাকা আসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে। কিন্তু অধিদপ্তর বাজেট অনুমোদন দিচ্ছে না।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক  মো.আবু হেনা মোস্তফা কামাল গতকাল শনিবার বলেন, বাজেট ছাড় হয়ে গেছে এবং এনসিটিবি সেটা পেয়ে যাবে। 

যে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় বই দেওয়া হয় সেগুলো হলো, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা(ককবরক), গারো ও ওঁরাও(সাদরি)। এর মধ্যে চাকমা ও মারমা ভাষার বইগুলো তাদের নিজস্ব লিপিতে লেখা। বাকি তিনটি নৃগোষ্ঠীর বইগুলো হয় কোনোটি বাংলা লিপিতে, কোনোটি রোমান হরফে।

সূত্র: প্রথম আলো

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041561126708984