বিদেশি শিক্ষার্থীদের ৯৭ শতাংশই পড়াশোনা শেষে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্য ত্যাগের পরিসংখ্যান প্রকাশের পর এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
কোনো প্রকৃত পরিসংখ্যান ছাড়াই থেরেসা মের সরকার এত দিন দাবি করছিল যে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রতিবছর লাখো বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে থেকে যান। এখন প্রকাশিত পরিসংখ্যান সরকারের সেই দাবিকে ভুল প্রমাণ করল।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত এক বছরে যে ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাজ্যে থেকে গেছেন, তাঁরা সংখ্যায় মাত্র ৩ হাজার ৩০০ জন। এই এক বছরে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া মোট ১ লাখ ৮১ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৭ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য ছেড়ে গেছেন।
দেশ ছেড়ে যাওয়া লোকদের প্রকৃত কোনো হিসাব যুক্তরাজ্য রাখত না। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা আন্তর্জাতিক যাত্রী জরিপের ওপর ভিত্তি করে অভিবাসনের একটি সার্বিক হিসাব প্রকাশ করত। অভিবাসন হিসাব নিয়ে বিতর্কের জের ধরে ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য যাত্রী বহির্গমনের প্রকৃত হিসাব (এক্সিট চেক) চালু করে। বহির্গমন চেক চালুর পর এই প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করল স্বরাষ্ট্র বিভাগ।
পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রভাব সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা পেয়ে মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজারি কমিটিকে একটি প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এতে যুক্তরাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রভাব নির্ণয়ের চেষ্টা করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ সেই প্রতিবেদন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত মার্চ পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যে মোট অভিবাসন কমে হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ লোক যুক্তরাজ্যে আসে এবং যে পরিমাণ লোক যুক্তরাজ্য ছেড়ে যায়, তার পার্থক্যকে বলা হয় মোট অভিবাসন।
উল্লেখিত এক বছরে যুক্তরাজ্যে আসে মোট ৩ লাখ ২৭ হাজার লোক। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যায় ৮১ হাজার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কারণে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের আগমন কমে গেছে। পাশাপাশি ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকেরা অধিক হারে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাচ্ছে। এতে মোট অভিবাসন কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মোট অভিবাসন কমার ক্ষেত্রে বিদেশি শিক্ষার্থী কমার তেমন কোনো প্রভাব নেই বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
অনেক দিন ধরে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের মোট অভিবাসন হিসাব থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে থেরেসা মের সরকার এতে সায় দেয়নি। নতুন এই পরিসংখ্যান সরকারের অবস্থানকে এবার দুর্বল করল।