শিক্ষায় ভেজাল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষায় ভেজাল

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায় সর্বমহলে অভিনন্দিত। আজকের শিশু আগামীর প্রজন্ম। শিশুদের সুশিক্ষায় গড়ে তোলা না হলে ভবিষ্যৎ নাগরিক হবে মেধাহীন। ইদানিং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তারিখ ও ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য জানা নেই জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের। অথচ জাতীয় গুরুত্ব সম্পন্ন এসব তথ্য ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জানার কথা।  

এর অন্যতম কারণ হলো শিক্ষায় ভেজাল। তবে সবচেয়ে বেশি ভেজাল হলো শিশু শিক্ষায়। ছোট্ট সোনামণিদের শিক্ষা দেখভাল করার জন্য রয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু শিশু শিক্ষায় ভেজাল নিয়ে নেই তাদের কোনো তৎপরতা।

শিশু শিক্ষায় মেধা বিনাশকারী বই চলছে বেসরকারি তথা কিন্ডার গার্টেন নামক বিদ্যালয়গুলোতে। শিক্ষার্থীরা কতটুকু জ্ঞান অর্জন করল তা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণি থেকে বাংলা, ইংরেজি গ্রামার বই পাঠ্য তালিকায় রয়েছে। প্লে, নার্সারি, কেজির নামে অগণিত বই ও খাতার সমাহারও আছে। সেখানে থাকার কথা গান-বাজনা, ছড়া, সহজ ছন্দময় খেলার ছলে পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়ে শব্দের মাধ্যমে সহজে বর্ণ শেখা।

শিশুর ওজনের ১০ শতাংশ বোঝা বহন করা নিষেধ। এতে শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে দারুণ বিপর্যস্ত হয়। মহামান্য হাইকোর্টের এ নির্দেশনাও তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ও চোখ বন্ধ করে শুধু দেখছে। কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কিন্ডার গার্টেনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এ ধরণের বক্তব্য লোক দেখানো।

ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য কিন্ডার গার্টেন শুধু গজাচ্ছে ও ব্যবসা করে যাচ্ছে। শিশুর মেধাবিনাশকারী কিন্ডার গার্টেনের লাগাম টেনে ধরার নিদের্শনা কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিবেন? উপর থেকে বৃষ্টি আসবে, আমরা শুধু হা করে গিলবো, তা হতে পারে না! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো শিশুর ওপর চাপ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষার্থীরা তো বাংলাদেশেরই শিশু। কেন কিন্ডার গার্টেনকে খুঁটিতে না বেঁধে আগামী প্রজন্মের মেধাবিনাশ করা হচ্ছে?


শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের বিলম্বে আগমন, দায়িত্বে অবহেলা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শিশুর মেধা বিনষ্ট করার দায়ে শীর্ষমহল কেন শাস্তির আওতায় আসবে না এ প্রশ্ন কোথায় রাখবো? ভেজাল খাবার যেমন- রং মিশানো, বিষাক্ত ওষুধ ছিটানো, ফরমালিন ব্যবহার করা, ইউরিয়া সার ব্যবহার করে মুড়ি ভাজা নানা প্রকার ভেজাল সম্পর্কে কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশের জনগণ জানতো না। শিশু শিক্ষায় ভেজাল ছোট শিশুর জন্য মনোবিজ্ঞান বহির্ভূত অসংখ্য বই, শিশু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারনাহীন শিক্ষক, খেলাধুলা, আনন্দদায়ক পরিবেশের অভাব বিদ্যমান।

আজও আমাদের দেশের বেশির ভাগ অভিভাবক এমনকি নামিদামি শিক্ষিত ব্যক্তিরাও অল্প বয়সে শিশুকে বড় পন্ডিত বানানোর আশায় ভেজাল মিশ্রিত কঠিন কঠিন ইংরেজি, আরবি, বাংলা শব্দ শিখিয়ে আনন্দ পান। বিষয়টি অনেকটা শিশুর দাঁত উঠার আগেই হাড় চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করানোর মতো। বাল্যবিবাহ যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ছোট শিশুদের বয়স-রুচি-সামর্থের বাইরে শিক্ষা দেয়াও ক্ষতিকর। উপযুক্ত শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজন কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা।
 
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকল শিশুর অভিন্ন পাঠ্যবই, কর্মঘণ্টা দাবিতে মানববন্ধন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে চালু হবে মূল্যায়ন পদ্ধতি। এ মূল্যায়ন শুধু প্রাথমিকের একাংশ শিশুর জন্য কেন? মূল্যায়নের সফলতার জন্য শিক্ষক সংকট শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। ব্যর্থতার জন্য দায়িদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকা সবার জন্য প্রযোজ্য থাকা কাম্য।

আমাদের অনেক অভিভাবকের সাথে শিক্ষকরাও পরীক্ষা পাগল। এ মূল্যায়ন ব্যবস্থায় সকল শিশুর অধিকতর জ্ঞান অর্জন হোক। মৃত্যু ঘটুক হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসার মতো পরীক্ষা ব্যবস্থার। এ মূল্যায়ন ব্যবস্থায় শিশুর সার্বিক জ্ঞান যাচাইয়ে হোক। তাহলে পরীক্ষা পাগল অভিভাবক ও শিক্ষকদের পরীক্ষা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর হবে।

আগামী প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে ও বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল শিশুর জন্য অভিন্ন (পাঠ্যবই, কর্মঘণ্টা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা) কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা করছি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। খাদ্যে ভেজালের মতো শিক্ষা ভেজালের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক। 

লেখক: আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।
 

 

নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049118995666504