রাজধানীর মালিবাগের বাসা থেকে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রুমমেটদের উপস্থিতিতেই ঢাকা কলেজের ছাত্র আল-আমিন মাহমুদ বিজয়কে ডেকে নিয়ে যান তার দূরসম্পর্কের মামা রিপন। এর কয়েক ঘণ্টা পর বাবা আনোয়ার হোসেনকে ফোন দিয়ে বিজয় বলেন, ‘বাবা আমাকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছে, ৩ ঘণ্টার মধ্যে ১ লাখ টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলা হবে।’ মঙ্গলবার সকালে মিরপুর বড়বাগ এলাকার একটি বাসা থেকে বিজয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, টাকার জন্যই তাকে কৌশলে অপহরণ করা হয়। আর চাহিদামতো টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করে ঘাতকরা। এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মিরপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনায় কলজছাত্রের বাবা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করছেন। বিজয়ের রুমমেট, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ হত্যার সঙ্গে রিপন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে রিপন পলাতক রয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘মোবাইলে টাকা চাওয়ার বিষয়ে তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না। শুধু টাকার জন্য নাকি অন্য কোনো কারণে বিজয়কে খুন করা হয়েছে, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
বিজয় নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার তার রুমমেট জসিম উদ্দিন শাহজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিজয়ের লাশ দেখতে এসে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিজয়ের বাড়ি হবিগঞ্জ মাধবপুর উপজেলার দেবনগরের ধর্মঘর গ্রামে। ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিল সে। ঢাকার শাহজাহানপুর থানাধীন মালিবাগ ১ম লেনের ৩১/১ নম্বর বাসায় ৬ জন মিলে তার মেসে ভাড়া থাকত। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের মেসে রিপন নামের এক লোক আসে বিজয়ের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বিজয়ের মামা হন বলে পরিচয় দেন। ওই মামা মিরপুর যাবেন এজন্য বিজয় তাকে মৌচাক বাস স্টপেজে এগিয়ে দিতে যায়। এরপর সে বাসায় ফেরেনি। তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।’
বিজয়ের বাবা আনোয়ার হোসেনের বরাত দিয়ে জসিম উদ্দিন জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় বিজয় তার নিজের মোবাইল দিয়ে তার বাবাকে ফোন দেয়। তখন সে বাবাকে বলে, ৩ ঘণ্টার মধ্যে ১ লাখ টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলা হবে। এর পরপরই মোবাইল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিজয়ের মোবাইল থেকে আবার তার বাবার মোবাইলে ফোন আসে। তখন অন্য এক ব্যক্তি বলেন, আপনার টাকা পাঠানোর কথা ছিল, পাঠাননি কেন। এই বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর বিজয়ের বাবা আনোয়ার ওই নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পাঠান। পরে আর ওই নম্বরে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আজহারুল নামের আরেক রুমমেট বলেন, ‘মঙ্গলবার মিরপুর থানা পুলিশ বিজয়ের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি আমাদের ফোনে জানায়। পরে মর্গে গিয়ে আমরা বিজয়ের লাশ শনাক্ত করি। রুমমেটদের ধারণা, রিপন নামের ওই কথিত মামাই বিজয়কে হত্যা করেছে। তাকে ধরা গেলেই হত্যার সব বিষয় জানা যাবে।’
নিহত কলেজছাত্রের বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রিপন সম্পর্কে আমার নাতি হয়। তবে ওর সঙ্গে আমার কোনো আর্থিক লেনদেন নেই। রিপন আমার ছেলের কাছে টাকা পেত কিনা আমার জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, সোমবার রাতে ছেলে ফোন দিয়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে এক লাখ টাকা দিতে বলে। মঙ্গলবার সকালে অন্য একজন ফোনে আবার টাকা চাইলে আমি বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠাই। এ ঘটনার সঙ্গে যদি রিপন জড়িত থাকে তাহলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।