সম্রাটের মুখে কুশীলবদের নাম - দৈনিকশিক্ষা

সম্রাটের মুখে কুশীলবদের নাম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ক্যাসিনোকাণ্ডসহ অপরাধ জগতে সহযোগী কুশীলবদের নাম ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের মুখে। আড়ালে থাকা গডফাদারদের প্রশ্রয়ে অল্পদিনেই টাকার পাহাড় গড়েছেন সম্রাট। ওই টাকার ভাগ পেতেন আড়ালে থাকা কুশীলবরা। সেই কুশীলব, টাকা ও অস্ত্রের সন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রিমান্ডে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সম্রাটকে। প্রথম দিনই গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন যুবলীগ নেতা সম্রাট। সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রমনা থানায় দায়েরকৃত মামলা দুটি থানা পুলিশ থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে র‌্যাবে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রুদ্র মিজান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গতকাল ডিবির হেফাজতে থাকা সম্রাট ও আরমানকে র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ক্যাসিনো কারবারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করে র‌্যাব। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) মিজানুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় থেকে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও এনামুল হক আরমানকে র‌্যাবে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দুটি তদন্ত করবে র‌্যাব। বুধবার রাতে র‌্যাবকে মামলা দুটি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

সূত্রমতে, শুরু থেকেই সম্রাট ও আরমানের রিমান্ডের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। রিমান্ডের প্রথম দিনই ডিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম সম্রাট ও আরমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। শিগগিরই তাদের জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে মুখোমুখি (জেআইসি) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি ছিল ডিবি পুলিশের। এরমধ্যেই  মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে র‌্যাবে। তবে ডিবি পুলিশ ও র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন সম্রাট। সূত্রে জানা গেছে, সম্রাট আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ স্থানীয় একডজনেরও বেশি নেতার নাম প্রকাশ করেছেন। যারা নিয়মিত তার কাছ থেকে টাকার ভাগ নিয়েছেন। সম্রাটের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন এরকম কয়েক পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেছেন, ক্যাসিনোর টাকার ভাগতো অনেকেই পেয়েছেন।

এ জন্য শুধু আমাকে দায়ী করা হচ্ছে কেন? কাকরাইল, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মতিঝিল এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে গেলেই চাঁদা দিতো হতো সম্রাটকে। চাঁদার জন্য হুমকি-ধমকি দিতো তার লোকজন। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি মার্কেট থেকে আসতো কোটি কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের মার্কেটগুলোতে অবৈধভাবে দোকান তৈরি করে বিপুল অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করতো সম্রাটের অনুসারীরা। গোয়েন্দা তথ্যানুসারে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের সিটি প্লাজা, জাকের মার্কেট, নগর প্লাজা, মহানগর কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ারসহ বিভিন্ন মার্কেট থেকে এসব টাকা আসতো সম্রাটের কাছে। সিটি প্লাজা, জাকের মার্কেট ও নগরপ্লাজায় সহস্রাধিক অবৈধ দোকান তৈরি করে প্রতি দোকান থেকে ১৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে এই চক্র। টাকা না পেলে দোকানে তালা দিয়ে দিতো চক্রের সদস্যরা। এমনকি সিটি করপোরেশন থেকে বৈধ কাগজ করে দেয়ার নামে দ্বিতীয় দফা গত ফেব্রুয়ারিতে আরও ১০ থেকে ১৫ লাখ করে টাকা নেয়। সবই হতো সম্রাটের প্রশ্রয়ে। সম্রাটকে গ্রেফতারের পরপর এসব মার্কেট চক্রের হোতা দেলোয়ার হোসেন দিলুসহ অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। এসব মার্কেট থেকে কত টাকা আসতো, এই চক্রে কারা জড়িত? কোন কোন ভবন নির্মাণে চাঁদাবাজি করেছেন? এসব বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সম্রাটকে। জানা গেছে, বিভিন্ন অবৈধ খাত থেকে উপার্জিত টাকার ভাগ যারা নিতেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ কয়েক নেতার নাম প্রকাশ করেছেন সম্রাট।

ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এডভোকেট মোল্লা আবু কাওছার,  যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপিসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। সম্রাটের কাছ থেকে টাকার ভাগ নিয়েছেন এমন তালিকায় রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা ও সমাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাও রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন, উপাজির্ত অর্থ দিয়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করতেন তিনি। এমনকি দলের কর্মীদের সহযোগিতা করতেন। নিজের ব্যক্তিগত কাজে তেমন টাকা ব্যয় করেননি বলে জানান তিনি। ঘনঘন বিদেশে গিয়ে মূলত জুয়া খেলতেন।

মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে তার বাড়ি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে কোথায় কোন ব্যাংকে তার টাকা রয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে বারবার জানতে চাইলেও কৌশলে তা এড়িয়ে যান সম্রাট। কখনও কখনও রহস্যময় নিরবতা পালন করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থবোধ করছেন বলে জানান। এসময় সচেতনতার সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

উল্লেখ্য, মাদক ও অস্ত্র আইনের পৃথক দুই মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ১৫ই অক্টোবর ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একইভাবে সম্রাটের সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের প্রথম দিনই গ্রেফতার করা হয় সম্রাটের সহযোগী যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। তারপর থেকেই আতঙ্কে ছিলেন সম্রাট। গ্রেফতার এড়াতে কর্মী বেষ্টিত অবস্থায় কয়েক দিন নিজের কাকরাইলের অফিসে থাকলেও পরে আত্মগোপনে চলে যান। গত ৬ই অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079569816589355