মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমানের মরদেহ রোববার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ অধিদপ্তরে রাত ৮ টা ৫ মিনিটে আনা হয় । নামাযে জানাজায় অংশ নিতে এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সেখানে উপস্থিত হন শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকসহ শিক্ষা পরিবারের সদস্যরা।
রাত ৮টা ২৭ মিনিটে শিক্ষা অধিদপ্তরের পাশে গণপূর্তর মাঠে মাহাবুবুর রহমানের নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রোববার রাত ৯ টা ৫ মিনিটে রাজধানীর কাঁটাবনের বাসভবনে কিছুক্ষণ রাখার পর লাশবাহী গাড়িতে করে মাগুরার শ্রীপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান অসময়ে চলে গেলেন। যা সবার জন্য দু:খজনক। মন্ত্রী বলেন, তিনি একজন ভাল শিক্ষক ছিলেন, একজন ভাল অধ্যক্ষ ছিলেন। উনার মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমানের ভাল কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষা পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
সোমবার সকালে শ্রীপুর উপজেলার কাজলি স্কুল মাঠে দ্বিতীয় দফা নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে তৃতীয় দফা নামাযে জানাজা শেষে আলীপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন দেয়া হবে।
অধিদপ্তরের পাশে পিডব্লিউডি চত্বরে মহাপরিচালককে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মো. আলমগীর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদ, এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব), বিসিএস ৮৫ ফোরাম, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ,নটরডেম কলেজ, মাগুরা জেলা সমিতির,ইডেন মহিলা কলেজ, শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট,ঢাকা কলেজ, সুবিধখালী সরকারি কলেজ, বাংলাদেশ রোভার স্কাউট, রাজশাহী কলেজ, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ,বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি,স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ,বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ),জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক পরিষদ (জাকশিপ), বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ, রাজউক কলেজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শনিবার (৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় আনুমানিক দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের আইসিইউতে ‘ইসিএমও’ সাপোর্টসহ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।গত ১৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেলে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হন মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান। সেদিন রাতেই পরিস্থিতির অবনতি হলে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএসএমইউ) ভর্তি করা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে কেবিন ব্লকের ৭ম তলার আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বছরের ৭ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে যোগদান দেন অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমান। বিসিএস সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে রাজেন্দ্র কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর সরকারি বিএম কলেজ ও শরীয়তপুরের একটি মহিলা কলেজ শিক্ষকতা করেন। পরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে উপাধ্যক্ষ এবং একই কলেজে পাঁচ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন তিনি।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।